বটিয়াঘাটায় কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

প্রকাশঃ ২০১৮-১০-০৩ - ২১:০৫

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধিঃ বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের মিঠুন মন্ডল(১৭) নামে এক কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের মৃতঃ প্রশান্ত মন্ডল প্রোরর পুত্র এবং রাখাল মন্ডল ওরফে পাগল চাঁদের দৌহিত্র।
মৃতের মা ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৈত্রিক সম্পত্তির জন্য তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ দিকে মিঠুনের ছোট কাকা জয়দেব মন্ডলের দাবী সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে এ আত্মহত্যা করেছে। গতকাল বুধবার ভোর ৬টার দিকে জয়দেব গ্রামে প্রচার করে মিঠুন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে জয়দেব ও তার বাবা পাগল চাঁদ থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। মৃতের মা প্রনীতা মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে মিঠুনকে কাকা জয়দেব ও ঠাকুরদাদা পাগল চাঁদ ষড়যন্ত্র করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। তিনি আরও জানান, মিঠুনের যখন ২ বছর বয়স তখন তার স্বামী দূরারোগ্য ব্যধিতে মারা যান। মিঠুনের ঠাকুরদাদা পাগল চাঁদের তিন পুত্র এবং প্রায় ৯০ বিঘা জায়গা জমি। সেই অংশ মোতাবেক মিঠুনের বাবা ওই সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ আনুমানিক ৩০ বিঘা সম্পত্তির মালিক। মিঠুনের বাবা মারা যাওয়ার পর ওই অংশটি ওয়ারেশ সূত্রে মিঠুনই ছিলো একমাত্র ন্যয্য দাবীদার। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তার শ্বশুর পাগল চাঁদ ও দেবর জয়দেব ষড়যন্ত্র করে বসতবাড়ী থেকে সরিয়ে দিয়ে বিলের ভিতর মৎস্য ঘেরের মধ্যে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে কোনোমতে থাকার ব্যবস্থা করে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তার শ্বশুর পাগল চাঁদ ও দেবর জয়দেব মাঝে মধ্যে কুপ্রস্তাব দিতো। আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় ধার দেনা করে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে ছেলে মিঠুনকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছিলো। মিঠুন সরকারী বটিয়াঘাটা ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। প্রায়ই মিঠুনের ঠাকুর দাদা ও ছোটকাকা দুইজনে মিলে তাকে ও তার ছেলেকে হাতের নঁখের ভিতর খেঁজুরের কাঁটা ফুটিয়ে দিয়ে মিঠুনের ওয়ারেশ সূত্রে পাওয়া ওই ৩০ বিঘা সম্পত্তি না দাবী লিখে দেওয়ার জন্য শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন চালাতো। কিন্তু লিখে না দেওয়ার কারনে জয়দেব ও শ্বশুর মিলে পরিকল্পিত ভাবে মিঠুনকে হত্যা করে তাদের বসতবাড়ির তেঁতুল গাছের ডালে একটি টেপ ফিতার দড়ি দিয়ে প্যান্ট, শার্ট ও জুতা পরা অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখে। ভোর ৬টার দিকে জয়দেব তেঁতুল গাছে মিঠুনের ঝুলন্ত লাশ থাকা অবস্থায় সে তা দেখতে পেয়েও গল্লামারীতে মাছ বিক্রি করতে চলে যায়। ফিরে এসে মিঠুন আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালায়। অপপ্রচার পেয়ে গ্রামবাসী ছুঁটে এসে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মিঠুনের মার বাসায় গিয়ে খবর দেয়। পরবর্তিতে তারা জয়দেবের বাড়ী গিয়ে তাদেরকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু ওই সময় বাড়ি থেকে সবাই পালিয়ে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদেরকে ততক্ষনে আটক করতে পারেনি। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ, উর্দ্ধতন জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না বলে বিক্ষোভ করতে থাকে। তবুও থানার ওসির নির্দেশে তড়িঘড়ি করে পুলিশ লাশ নিয়ে রওনা দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন পরিবহন যোগে থানার মধ্যে গন জমায়েত হয়। মিঠুনের মা এজাহার দিতে থানায় গেলে থানা পুলিশ মামলা রুজু না করে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ইউডি মামলা রুজু করে আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। পুলিশ লাশ গ্রহনের সময় মিঠুনের বাম হাত ফোলা এবং পিঠের ও বুকের বিভিন্ন স্থানে নিলাফোলা জখমের চিহ্ন দেখা যায়। ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, মনে হয়েছে আত্মহত্যা করেছে তাই ইউডি মামলা রুজু করে লাশ ময়না তদন্তে প্রেরন করা হয়েছে। মামলার জন্য ভূক্তভোগীদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছে।