বটিয়াঘাটায় পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর অবস্থান কর্মসূচী

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-১৩ - ১৯:৪৪

খুলনা অফিস : বটিয়াঘাটা উপজেলাধীন কৈয়াবাজার এলাকার শৈলমারী নদী তীরবর্তী ভেঁড়িবাধ এলাকায় রবিবার বিকাল ৩টায় ডাম ট্রাক চলাচলের ফলে পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে এলাকাবাসি অবস্থান কর্মসূচী করে। বটিয়াঘাটা উপজেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক উক্ত স্থানে দ্রুত বালির বেড ব্যবসায় বন্ধ করা না হলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে এলাকাবাসিরা জানান।

অবস্থান কর্মসূচীতে এলাকবাসিরা বলেন, বালির বেড থাকার কারণে নদী থেকে উত্তোলন করা বালি অপসারণের জন্য ডাম ট্রাক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে অতিরিক্ত ধুলাবালি বাতাসের সাথে উড়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত করছে। নদী তীরবর্তী বেঁড়িবাধের রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় বালি ভর্তি ট্রাকের ওজনে রাস্তাটি ভেঙ্গে যেতো। গত আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড মাটি কেটে রাস্তাটি উচু করে। ঐ রাস্তার দু’পাশে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের বসবাস। ১টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, ১টি প্রাইমারি স্কুল ও ১টি বাজার আছে রাস্তাটির ২ কিলোমিটারের মধ্যে। কিন্তু এতো বেশি ট্রাক চলাচলের কারণে মুসল্লিদের মসজিদে যাওয়া, মন্দিরে প্রার্থনা, কোমলমতি বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া ও বৃদ্ধদের বাজার করা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। একে তো করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের সকল কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে, তার উপরে এই পরিবেশ দূষণের ফলে এলাকাবাসি অতিষ্ঠ প্রায়।

এসময় শৈলমারী খেয়াঘাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মহালদার বলেন, প্রায় ১ বছর পূর্বে উক্ত স্থানে ১২টি বালির বেড ছিলো। পরিবেশ দূষণের ফলে এলাকাবাসির প্রতিবাদে তখনকার বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমান উক্ত স্থানে বালির বেড বন্ধ ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন বালির বেড বন্ধ থাকার পর গত ১ জুলাই ২০২০ ইং তারিখে পুনরায় অন্নদা প্রসাদ গোলদারের পুত্র অনুপ গোলদার নামে এক বালি ব্যবসায়ী উক্ত স্থানে বালির বেড করে ব্যবসায় শুরু করেন। যার ফলে এলাকায় আবারও পরিবেশ দূষণ, রাস্তা ভাঙ্গা শুরু। তিনি আরও বলেন, অনুপ গোলদার বটিয়াঘাটা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। এলাকাবাসি তার এই পরিবেশ বিমুখ স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচী করে।

শৈলমারী ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে খুলনার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উক্ত স্থানে ধুলাবালির ব্যবসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই হিরামন মহালদার, অনুপ গোলদার ও অরুপ গোলদার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও এলাকার মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে এমনকি ট্রাক দিয়ে চাপা দেওয়ার মাধ্যমে হত্যা করার হুমকি দিয়ে এলাকায় পুনরায় এই ব্যবসায় শুরু করে। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর আগে বালির ট্রাকে চাপা পড়ে উক্ত স্থানে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মারা যায়। তাছাড়া প্রায়ই ছোট ছোট দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। রাস্তায় প্রচুর ট্রাক চলার কারণে ধুলা উড়তে থাকায় কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যপার মাত্র। এমনিতেই অনেকে ধুলার কারণে এখন ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত থাকায় ট্রাক চলতে পারেনা। তাই প্রয়োজনে আরও কঠোর প্রতিবাদ কর্মসূচী করা হবে। উল্লেখ্য, অনুপ গোলদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার সহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ আছে বলে এলাকাবাসী জানান।

এ ব্যপারে অনুপ গোলদারের সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের কর্ণেল ফয়সালের ফ্যাক্টরী তৈরীর জন্য বালির প্রয়োজন। তাই এই বালির বেড করা হয়েছে। বালির কারণে পরিবেশ দূষিত হোক সেটা আমিও চাইনা। বালির ট্রাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে, বেঁড়িবাধ রাস্তায় ইট দিয়ে আমি আমার ব্যবসা পরিচালনা করছি। যেন রাস্তার ক্ষতি না হয়।