বন্ধ হয়নি ইয়াবা বিক্রির রুট : মাদকসেবীরা সহজে বেরিয়ে আসতে পারছে না

প্রকাশঃ ২০১৯-০৬-২২ - ১২:০৮

কামরুল হোসেন মনি : নিলুফা ইয়াসমিন (ছদ্মনাম)। বাগেরহাট এলাকার বাসিন্দা। ২০১৬ সাল থেকে ঘুমের ওষুধ খেতেন। খুলনায় থাকাকালীন বন্ধু মাছুম তার বাসায় ইয়াবা সেবন করতো। তার মাধ্যমে ইয়াবা নেশায় তার প্রবেশ। মাছুমের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রেতা মাসুদের সাথে পরিচয় হয়। সেই থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাসুদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন। মুহাম্মদনগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েলের বাসায় এই মাসুদ সেল্টার নিয়ে ইয়াবা বিক্রি করতেন। মাসুদ ক্রসফায়ারে নিহিত হলেও ইয়াবা বিক্রির রুট বন্ধ হয়নি। নেশার থেকে বেরিয়ে আসতে নিলুফা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ।

আমিনুর রহমান (ছদ্মনাম) কয়েক বছর ধরে ইয়াবা সেবন করেন। বাগেরহাট পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা। মাদকসেবী বলছিলেন, অভিযানের মধ্যেও সর্বত্রই মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় এটা বিশেষ বিশেষ স্পটে পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সব এলাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জেও এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এই নিয়ে সে ৫ বার সানমুন মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখান বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার বন্ধুদের পাল্লায় এই ইয়াবা নেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। পিতা-মাতা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে এখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

শুক্রবার খুলনা নগরীর লবণচরা বান্দাবাজার এলাকা সানমুন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মাদকসক্তদের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের মত এখানে ১২-১৩ জন মাদকাসক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। তারা জানান, ইয়াবা এখন পাওয়ার জন্য টেলিফোন করলে আপনার কাছে এসে দিয়ে যাবে। এখন এটা ঘর থেকে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। তারা জানান, তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। সাদা আইস দিয়ে তৈরি এক ধরনের ইয়াবা আছে দাম ৫শ টাকা। এছাড়া ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে এক পিস ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। এখন অনেকে পাড়া মহল্লায় ইয়াবা ব্যবসা করছে। যারা নেশা করে, তারাও টাকার জন্য যেমন নেশার পাশাপাশি বিক্রিতে নেমে পড়েছে তেমনি অনেকে শুধুমাত্র বেচাবিক্রি করে।

খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, নগরীতে মাদক বিক্রেতারা নেই বললেই চলে। অভিযানে মাদক বিক্রেতারা আটক হচ্ছে কেউ বা স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে রয়েছেন। যারা মাদক সেবন করছেন তাদেরকে আটক করা হচ্ছে। অনেক সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খুলনায় সরকারিভাবে একটি মাদকসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালু রয়েছে। এর বাইরে খুলনায় বেসরকারিভাবে ৬টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালু রয়েছে। এছাড়া আরও ৪টি লাইসেন্সের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডে সানমুন মাককাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ্রিয়ার ফারুক এ প্রতিবেদককে বলেন, মাদকের যে চিকিৎসা, সেটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। কেউ কেউ মনে করেন, কিছুদিন নিরাময় কেন্দ্রে থাকলেই মাদক নিরাময় হয়ে যায়। এটা ভুল ধারণা। এটা মনে রাখতে হবে, মাদকের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। মাদকের চিকিৎসা ২০-২৫ শতাংশ নিরাময় কেন্দ্রে হয়। মূল চিকিৎসা শুরু হয় নিরাময় কেন্দ্র থেকে বাসায় ফিরে এলে। এই চিকিৎসা সাধারণত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। এক্ষেত্রে রোগী ও রোগীর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও কাউন্সেলিং করা হয়।

তিনি বলেন, কোনো অবস্থায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা করা যাবে না। সব সময় বন্ধুর মতো আচরণ করার চেষ্টা করতে হবে। মনে করতে হবে, সে একটা বিপদে পড়েছে। এ বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।

সানমুন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদকাসক্ত অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে, আবারও আসক্ত হয়ে পুনরায় চিকিৎসাও নিচ্ছেন। তার মতে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপাদন যেমন সময়, স্থান, টাকা, মাদকাসক্ত পুরোনো বন্ধু ইত্যাদি। তাদের দেখলে মাদক গ্রহণের আগ্রহ বেড়ে যায়। অথবা যে জায়গা থেকে তারা মাদক নিতেন এবং যে জায়গায় বসে মাদক গ্রহণ করতেন এই বিষয়গুলো মাদক গ্রহণের বড় কারণ। সোজা কথা ভালো থাকতে হলে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছু পরিহার করতে হবে। মাদক অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে পড়াটাই বেশি দায়ী বলে তিনি মনে করেন। এক সময় যারা নেশা করতো, তারা এখন নেশার পাশাপাশি বিক্রির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে।