বাগেরহাটে সাবেক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০১৮-১০-২৬ - ১১:৪৩

এস.এম.সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সেখ আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার।

শেখ আকরাম হোসেন ২০১৭ খ্রিস্টাব্দর ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু যোগদানের  আগে একাধিকবার তার কাছে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৭শ ৫০ টাকার ঘাটতি রেখে তিনি চলে যান। আজও পর্যন্ত ওই টাকা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার এই অভিযোগ করেন।

জানাগেছে, শেখ আকরাম হোসেন ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট থেকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় আড়াই বছর বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই থেকে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ, অর্থ আত্মসাত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের ৬টি কক্ষ নিজে ব্যবহার করতেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয় প্রাক্তন ওই শিক্ষক ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ৮ আগস্ট বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ মূল বেতনের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বা বাড়িভাড়ার ২৫ শতাংশ কর্তন করার শর্তে একটি কক্ষে বসবাসের অনুমতি নেন। কিন্তু সেই থেকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অবৈধভাবে ৩টি কক্ষ ব্যবহার করে আসছেন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও ৩টি কক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল করে বসবাস করে আসছেন। এ ৬টি কক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা তিনি তসরুপ করেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী একের অধিক কক্ষে বসবাস করলে বাড়ি ভাড়ার শতভাগ কর্তন করতে হয়। কিন্তু তিনি শুরু থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ কর্তন করে আসছেন। তাকে একাধিকবার অতিরিক্ত কক্ষ ছেড়ে দিতে এবং বাড়িভাড়া কর্তন করার জন্য বলা হলেও তিনি তা মানছেন না। এছাড়া প্রতিমাসে হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক প্রদত্ত একটি প্রত্যয়নপত্র বিদ্যালয়ে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি তা জমা দেননি। এছাড়া আকরাম হোসেনের কাছে থাকা বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, ক্যামেরা, মনিটরসহ গুরুত্বপূর্ন নথির ফেরত দেয়ার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও তিনি তা ফেরত দেননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এসব কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের নথি পাওয়া গেলেও ওই অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত কোন মালামালের হদিস পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগকারী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন বলেন, বাগেরহাটের স্বনামধন্য সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬টি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার, সরকারি অর্থে বিদ্যালয়ের উপকরণ না কিনে অর্থ উত্তোলন, প্রায় ৫ লাখ টাকার হিসাব না দিয়ে এবং বিদ্যালয়ের দায়িত্ব না বুঝিয়ে দিয়ে বদলি হয়েছেন। তাকে একাধিকবার এসব দায়িত্ব বুঝে দেয়ার জন্য বলা হলেও তিনি বুঝিয়ে দেননি। এ কারণে আমি সাবেক প্রধান শিক্ষক সেখ আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক সেখ  আকরাম হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের কক্ষগুলো ব্যবহার করেছি। হিসাব রক্ষক না থাকায় অর্থের বিষয়ে যে গড়মিল রয়েছে তা অডিটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন ওই বিদ্যালয়ের আরও ৫জন শিক্ষক একইভাবে বিদ্যালয়ের কক্ষ ব্যবহার করে আসছেন।