বিপদের মুহুর্তে বিশ্বস্ত সঙ্গীদেরও পাশে পাচ্ছেন না বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি!

প্রকাশঃ ২০১৯-০৯-২৭ - ১৮:১৭

গোপালগঞ্জ : ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। তার দুর্দিনে পাশে পাচ্ছেন না এক সময়ের বিশ্বস্ত সঙ্গীদেরও। পিছুটান দিচ্ছেন তাদের অনেকেই। ভিসির পক্ষে সরাসরি কথা বলার সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউই এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে ভিসির পক্ষে কাজ করছেন না। ভিসির অসময়ে সুসময়ের বন্ধুরা পাশে নেই। বরং প্রশাসনের পদ থেকে পদত্যাগ শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি ভাঙতে শুরু করেছে। ওই বডি থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩জন পদত্যাগ করেছেন। ভিসির স্বৈরাচারি মনোভাব তারা মেনে নিতে পারেননি।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসির পেটোয়া বাহিনীর হামলার পর থেকেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ভাঙন দেখা দেয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি ভিসির ওই আচরণকে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষকদের একটি বড় অংশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি অংশ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চুপ রয়েছেন। তাদের অবস্থান ভিসির পক্ষে নেই। অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছেন তারা।
শিক্ষকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ মনে মনে ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনকে চাইলেও তারা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। শিক্ষক সমিতি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীয়াশীল কোন সংগঠনই ভিসির পক্ষে সরাসরি কোন অবস্থান নেয়নি। এমনকি তার পক্ষে কোন বিবৃতিও দেয়নি। উপরন্তু নীরব থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তাদের সামনে এসে কথা বলার সাহসও পাচ্ছেন না ভিসি। এমনকি ভিসির পক্ষে কেউ এসে কথা বলারও লোক নেই। এ অবস্থায় ভিসি ক্যাম্পাসেই আসতে পারছেন না। বাসায় বসে আন্দোলনের খবরা খবর নিচ্ছেন তিনি।
বিশ্বস্ত সূত্রমতে, ভিসির মদদপুষ্ট প্রশাসনে ইতিমধ্যে চিড় ধরেছে। তার অনুগত শিক্ষকদের একটি অংশ ইতিমধ্যে প্রশাসনিক পদ ছাড়তে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি থেকে ৩ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার সহকারি প্রক্টর ড. মো: তরিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো: নুরুদ্দীনের কাছে। পদত্যাগ পত্রে তরিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান। প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এ পদত্যাগ করছেন মর্মে পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেন।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সহকারী প্রক্টর নাজমুল হক শাহীন পদত্যাগ করেন। এছাড়া, গত ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বহিরাগত ক্যাডারদের হামলার প্রতিবাদে সহকারি প্রক্টর মো: হুমায়ূন কবীর পদত্যাগ করেন। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পর্যন্ত তিন জন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করলেন।
সূত্রটি আরো জানায়, প্রশাসরে অন্য পদে থাকা শিক্ষকরাও পদত্যাগের চিন্তা করছেন। আজ কালের মধ্যেই তারা পদত্যাগ করতে পারেন বলে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক নেতা বলেন, ভিসি প্রফেসর ড. নাসির উদ্দিনের আচরণ শিক্ষক সুলভ নয়। তার স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে তিনি নিজেকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার পাশে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষার্থী তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছে। জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্বৃত্তায়ন আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না।