বিলুপ্তপ্রায় ৯ প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধিতে খুলনায় বিশেষ উদ্যোগ

প্রকাশঃ ২০১৮-০৬-২৭ - ১৩:০৮

খুলনা : দাবদাহ, শৈত্য প্রবাহ, অতি বৃষ্টি, লবনাক্ততা ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিলুপ্তপ্রায় ৯ প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে খুলনায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মরা নদীতে পোণা অবমুক্তকরণ, অভায়াশ্রম গড়ে তোলা ও মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদি কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিস এ উদ্যোগ গ্রহন করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় গলদা, বাগদা ও পারশের পোণা ধরতে যেয়ে একাধিক প্রজাতির পোণা নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট জানায়, উপজেলা পর্যায়ে অনেক নদী ও খাল ভরাট হয়েছে। মাছের বিচরণ ক্ষেত্র কমে এসেছে। বাগদা চিংড়ির খামারের কারনে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া, নদ-নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ, কারখানার কেমিকেল মিশ্রিত পানি জলাশয়ে আসা এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। খুলনার ৯ উপজেলায় শৈল, গজাল, উলুসী টেংরা, সরপুটি, পাবদা, মাগুর ও কৈ মাছের বংশ বৃদ্ধিতে ৯ শ পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করণ কর্মশালার মাধ্যমে সচেতন করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু ছাইদ এ প্রসংগে পতিবেদককে জানান, বিলুপ্তপ্রায় ৯ প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ডুমুরিয়ার ভদ্রা নদী, মাড়–য়ার খাল, মির্জাপুর মরা নদী, দিঘলিয়া উপজেলার হাতিয়ার খাল, তেরখাদা উপজেলার বাশুখালি, সালতিয়া ও আগরখালি খালে এসব পোণা অবমুক্ত করা হয়েছে। তেরখাদার কোলা বাশুখালি বিল থেকে শিং ও মাগুরের উৎপাদন আশা ব্যঞ্জক। ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরোজ কুমার মল্লিক জানান, অভায়াশ্রম গড়ে তোলার পর স্থানীয় হাটে বাজারে শৈল, কৈ, শিং, চিতল, পাবদা, উলুসী টেংরা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সাতক্ষিরা মৎস্য অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, পূরাতন সাতক্ষিরায় জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষিত যুবক এক কাঠা জমিতে শৈল মাছের চাষ করে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ভরষাপুর গ্রামের আব্দলু মতিন ১০ শতাংশ জমিতে শৈল মাছ চাষ করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ও মেরিন ডিসিপ্লিনের প্রভাষক সুদীপ দেবনাথ এ প্রসংগে জানান, অবাধে পোণা ধরা, নদী ভরাট, পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, মাছের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসা ইত্যাদি কারনে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধি কমেছে। কীটনাশক খাল বিলে ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত ও মৎস্য প্রজনন নানা ভাবে ব্যহত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার গত মাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে খুবি সংলগ্ন ময়ুর নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। গত তিন বছর যাবত এ নদীতে জলজ জীব প্রজনন করতে পারে না। এ নদীর পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
স্থানীয় সূত্র গুলো জানিয়েছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজীবাছা, সালতা, চুনকুড়ি, দাকোপ উপজেলার শিবসা, মোংলা বন্দর এলাকার পশুর, কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া নদীতে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ কারেন্ট জাল দিয়ে চিংড়ি ও পারশের পোনা ধরার ফলে ভেটকি, টেংরা, পায়রা, দাতনে প্রজাতির পোণা নিধন হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় চিংড়ির পোনা ধরা নিষিদ্ধ।