ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারী চক্র ফের সক্রিয়!

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-২৭ - ১৩:১২

বিশেষ মহলের চাপে হেরাজ মার্কেটের অভিযোগ প্রত্যাহার

কামরুল হোসেন মনি
নগরীর হেরাজ মার্কেটে ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারী চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বুধবার ওই মার্কেট থেকে ইউনানী ও হারবালের বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধসহ হাতেনাতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আটক করেন। থানায় এ বিষয়টি নিয়ে পৃথক দুটি অভিযোগ দিলেও পরবর্তীতে একটি বিশেষ মহলের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় অভিযোগকারীরা। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে নকল ও ভেজলা ওষুধ জব্দসহ চক্রটির সদস্য আটক করলেও বাজার থেকে কাটছেই না নকল ওষুধের আতঙ্ক।
সদর থানার এসআই মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, বুধবার এ ঘটনায় দুইজন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর মধ্যে একজন ওই দিন অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। এর আগে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে হেরাজ মার্কেটে ওই ফার্মেসি দোকানে গেলে ফার্মেসিটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হেরাজ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার শীব ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই ফার্মেসি আজীবনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত নাসির পালিয়ে থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, হেরাজ মার্কেটে কমিটি ও বিসিডিএস কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে সভা হয়। সভায় অভিযুক্ত নাসির তার অপকর্মের বিষয় স্বীকার করেন। এ ধরনের জঘন্যতম কাজ কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ফার্মেসিকে আজীবনের জন্য এই মার্কেট থেকে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়।
খুলনার ড্রাগ সুপার মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, ওষুধ কোম্পানি খুলনার প্রতিনিধি আমাকে অবহিত করেন। ওই সময় আমি ডিসি অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। তারা আমাকে জানান, তাদের কোম্পানির নকল ওষুধ জব্দ করেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করার জন্য তাদেরকে পরামর্শ দেই। ওই মুহূর্তে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকায় এবং পরীক্ষা চলমান থাকার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষা হলে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযান করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এ বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা চলছে বলে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান।
জানা গেছে, বুধবার নগরীর হেরাজ মার্কেটের দ্বিতীয় তলা মসজিদের সামনে সাইনবোর্ড বিহীন একটি ফার্মেসির মোঃ নাসির দীর্ঘদিন ধরে ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও গুড হেলথ কোম্পানির হারবাল ও ইউনানী ওষুধ নকল তৈরি করে নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসি দোকান ও গ্রামঞ্চলে সরবরাহ করে আসছিল। ওই দিন দুপুরে ওই ফার্মেসির মালিক নাসিরকে গুড হেলথ কোম্পানি ইউনানী ওষুধ লোমাটন ও নুভেপ্য এবং ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইউনানী হাইসোক্যাল ও হারবালের আইভেরি ওষুধগুলো নকল তৈরি করে সরবরাহ করার সময় হাতেনাতে আটক করে। অভিযুক্ত নাসির ওই সব কোম্পানির ওষুধ নিজে ঘরে বসে ওষুধের লেবেল, স্টিকার তৈরি করে পটের মধ্যে নকল ওষুধ ভরে বাজারে সরবরাহ করে আসছিল। পরবর্তীতে নাসিরের স্বীকারোক্তিকে ওই দুই কোম্পানির ওষুধ নগরীর ময়লাপোতা, গল্লামারী ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মোট তিনটি ফার্মেসি থেকে ওই কোম্পানির ওইসব নকল ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়। এরপর হেরাজ মার্কেটের কমিটি ও বিসিডিএস এর কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তারা ওই দিন সভায় নাসির ফার্মেসিকে আজীবন বন্ধ ঘোষণা ও জরিমানা প্রদান করেন। এর আগে ওই দুই কোম্পানির খুলনার প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির ওষুধ নকল ও ভেজাল উদ্ধার বিষয়ে সদর থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার জিডি নং ১৪৭৮-২৫/০৪/১৮ অপরটি হচ্ছে ১৪৭২-২৫/০৪/১৮। পৃথক দুইটি জিডিতে উল্লেখ করা হয়, আইভেরি ট্যাবলেট, হাইসোক্যাল ক্যাপসুল ও লোমাটন হেরাজ মার্কেটে দ্বিতীয় তলায় মসজিদের বিপরীতে একটি ফার্মেসি দোকানদার মোঃ নাসির তাদের কোম্পানির ওষুধ নকল করিয়া বিক্রি করিতেছে। বিষয়টি স্থানীয় ড্রাগ সুপারকে অবহিত করা হয়।