মরে গেছে সুন্দরবন উপকূলের ২৩টি নদী

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-০১ - ১৮:১০

আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : সুন্দরবন উপকূল সন্নিহিত এলাকায় মরে গেছে অন্তত ২৩টি নদী। মোংলা ও রামপালসহ আশপাশের এলাকার উপর দিয়ে বহমান এসব নদীতে এখন আর লঞ্চ স্টিমার, কার্গো-কোস্টারসহ কোন ধরণের নৌযানই চলাচল করতে পারছেনা। এ নদী গুলোর অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে ভাটার সময় নদীতে হাটু পানিও থাকে না। সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা ও রামপালসহ বাগেরহাট এলাকায় মরে যাওয়া ২৩টি নদীর মধ্যে রয়েছে পুটিমারী, বিশনা, দাউদখালী, ঘাষিয়াখালী, ভোলা, কালিগঞ্জ, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা, বেমরতা দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী ,দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা নদী। এছাড়া অতিরিক্ত পলি পড়ে মরে গেছে এ এলাকার ৩ শতাধিক ছোট-বড় খাল।
এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার সাথে সারা দেশের স্বাভাবিক নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর চলছে না মোংলা-খুলনা-ঢাকা লঞ্চ সার্ভিস। নদী খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুস্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানিও পাচ্ছেনা। আর বর্ষা মৌসুমে জলাদ্ধতায় প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে।
এ এলাকার লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে বাধ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি উঠতে পারছেনা। পানি উন্নয়ন র্বোডের (ওয়াপদা) ৫ টি পোল্ডারের ১৬৫ টি স্লুইস গেটে সরকারীভাবে কোন লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফ্লাপগেট (স্লুইস গেটের নিচের অংশ) গুলো সব সময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী। অন্যদিকে ফারাক্কা বাধের কারণে এসব নদী গুলোতে উজানের পানি না আসার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকায় অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী খাল। এ কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে যেয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে এ এলাকার সবুজ প্রকৃতি ।
পলি জমে শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাঈনুদ্দিন বলেন, মোংলা বন্দর থেকে ঘাষিয়াখালী চ্যানেল হয়ে বন্দরের সাথে সহজ যোগাাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদর হয়ে দাউদখালী নদীতে এ বছর ড্রেজিং করা হয়েছে। জুনে এই চ্রানেলটি খুলে দেয়া হবে।
বাগেরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, নদী-খাল ভরাট হওয়ার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে সমুদ্রের লোনা পানি বদ্ধ হয়ে দেশি প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।