মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৬ আসামির কার, কি দায়িত্ব ছিল!

প্রকাশঃ ২০১৯-১০-২৪ - ১৯:২৪
ঢাকা অফিস :  কে, কখন, কোথায়, কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তা আগেই নির্ধারণ করা ছিল।  নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামি কিভাবে, কোথায়, কখন, কি দায়িত্ব পালন করবেন, তা আগে থেকেই বৈঠক করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর কারাগার থেকে পুরো বিষয়টি তদারকি করেছেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা। ৩রা ও ৪ঠা এপ্রিল মাদ্রাসার পশ্চিম হোস্টেলে বৈঠক করে চুড়ান্ত করা হয় হত্যার পরিকল্পনা ও বণ্টন করা হয় দায়িত্ব।

২৭শে মার্চ নুরসাতকে যৌন হয়রানির মামলায় কারাবন্দি হন অধ্যক্ষ সিরাজ। তাকে বাঁচাতে কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, নূর উদ্দিন এবং শামীমসহ অনেকেই আন্দোলনসহ নানা প্রচেষ্টা চালান। ৩রা ও ৪ঠা এপ্রিল চার দফা নূর উদ্দিনসহ কয়েকজন কারাগারে গিয়ে সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। পাশাপাশি ৩রা ও ৪ঠা এপ্রিল রাতে মাদ্রাসার পশ্চিম হোস্টেলের বৈঠকে চুড়ান্ত হয় হত্যা পরিকল্পনা ও দায়িত্ব বণ্টন।

আসামিদের স্বীকারোক্তিতে নুসরাত হত্যায় সব তথ্যই মিলেছে।

১. মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ না নিলেও পিবিআইয়ের ভাষায়, ‘তার চেয়ে বেশি’ করেছেন। নুসরাতের যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, তাতে কাজ না হওয়ায় ভয়ভীতি দেখানো এবং পরে নুসরাতকে হত্যার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

২. নূর উদ্দিন: নুসরাত হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নূর উদ্দিনের। পিবিআই বলছে, নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার আগে রেকি করা ছিল তার দায়িত্ব। আর ভবনের ছাদে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সময় নিচে থেকে পুরো ঘটনার তদারকি করা ছিল তার দায়িত্ব।

৩. শাহাদাত হোসেন শামীম: নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন শামীম। সেজন্য ছিল তার ক্ষোভ। হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে কার কী ভূমিকা হবে সেই পরিকল্পনা সাজান শামীম। কাউন্সিলর মাকসুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি তার বোরখা ও কেরোসিন কেনার ব্যবস্থা করেন। নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সময় তিনি হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন।

৪. কাউন্সিলর মাকসুদ আলম: অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার হলে ২৮শে মার্চ তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ। বোরখা ও কেরোসিন কেনার জন্য তিনিই ১০ হাজার টাকা দেন। পুরো ঘটনার আগাগোড়াই তিনি জানতেন।

৫. সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের: বোরখা ও হাতমোজা পরে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন জোবায়ের। নুসরাতের ওড়না ছিঁড়ে দুই ভাগ করে পা বাঁধা এবং কেরোসিন ঢালার পর ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরানোর কাজটি জোবায়েরই করেন।

৬. জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন: বোরখা পরে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন জাবেদ। পা বাঁধা হলে পলিথিন থেকে কেরোসিন গ্লাসে ঢেলে তিনি নুসরাতের গায়ে ছিটিয়ে দেন। সব কাজ শেষে বোরখা খুলে পরীক্ষার হলে ঢুকে যান।

৭. হাফেজ আব্দুল কাদের: নুসরাতের ভাই নোমানের বন্ধু কাদের সেদিন মাদ্রাসার মূল ফটকে পাহারায় ছিলেন। নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া হলে ২ মিনিট পরে তিনিই ফোন করে নোমানকে বলেন, তার বোন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

৮. আবছার উদ্দিন ঘটনার সময় গেইটে ছিলেন পাহারায়। মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়াও তার দায়িত্ব ছিল।

৯. কামরুন নাহার মনি: কামরুন্নাহার মনি ২ হাজার টাকা নিয়ে দুটি বোরখা ও হাতমোজা কেনেন। হত্যাকাণ্ডে মনি সরাসরি অংশ নেন। ছাদের ওপর নুসরাতের হাত বাঁধা হলে তাকে শুইয়ে ফেলে বুকের ওপর চেপে ধরেন মনি। আগুন দেয়া হলে নিচে নেমে এসে আলিম পরীক্ষায় বসেন।

১০. উম্মে সুলতানা পপি: অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি সেদিন নুসরাতকে ডেকে ছাদে নিয়ে যান। পরে, মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তাতে রাজি না হওয়ার নুসরাতের ওড়না দিয়ে তার হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলেন। নুসরাতকে ছাদে শুইয়ে চেপে ধরেন পপি। নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া হয়ে গেলে পপিও নিচে নেমে পরীক্ষার হলে বসেন।

১১. আব্দুর রহিম শরীফ ঘটনার সময় তিনি মাদ্রাসার ফটকে পাহারায় ছিলেন। পরে, তিনিও এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালান।

১২. ইফতেখার উদ্দিন রানা মাদ্রাসার মূল গেইটের পাশে পাহারায় ছিলেন।

১৩. ইমরান হোসেন ওরফে মামুন মাদ্রাসার মূল গেইটের পাশে পাহারায় ছিলেন।

১৪. মোহাম্মদ শামীম সাইক্লোন সেন্টারের সিঁড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন। কেউ যেন ওই সময় ছাদে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করা ছিল তার দায়িত্ব।

১৫. মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমীন: স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন শুরু থেকেই এ হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন। ঘটনার পর পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার পর শামীমের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টাতেও তার ভূমিকা ছিল।

১৬. মহিউদ্দিন শাকিল ঘটনার সময় সাইক্লোন সেন্টারের সিঁড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন।