মোংলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় ১০টি জাহাজসহ ৭০টি জলযান প্রস্তুত

প্রকাশঃ ২০২০-০৫-১৯ - ২০:১৪

মোংলা প্রতিনিধিঃ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর ও তৎসংলগ্ন সুন্দরবনের নদ নদী খুবই উত্তাল রয়েছে। এজন্য আবহাওয়া অধিদফতর সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বলবত রেখেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলের আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর ৩টা থেকে হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এদিকে বুধবার বিকাল বা রাতে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘুর্নিঝড়টি মোংলা বন্দর ও সুন্দরবন উপকুলের উপর দিয়ে সুপার সাইক্লোন আকারে রুপ নিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস। তবে সাগর প্রচন্ড উত্তল রয়েছে এবং সেখানকার সুন্দরবনের জেলেরা রিনাপদে আশ্রায় নিয়েছে বলে জানায় র‌্যাব ও দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সদস্যরা। অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র প্রভাবে মোংলা সমুদ্র বন্দরে বিশেষ সতর্কতা এলার্ট-৩ জারি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে খোলা হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি কন্ট্রোল রুম। বন্দরে এই মুহূর্তে মেশিনারি, ক্লিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লাসহ মোট ১১ টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে পণ্য খালাস-বোঝাই বন্ধ রাখার জন্য সতর্কতা জারি হওয়ায় বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজ বন্ধ রেখেছে বলে জানায় বন্দর ব্যাবসায়ীরা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইল ফোনে জানান, এ মুহুর্তে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কন্ট্রোল রুম খোলাসহ বন্দরের সকল নৌযান ও স্থাপনায় সতর্কতা জারী করা হয়েছে। যাতে আবহাওয়ার আরো অবনতি হলেই নৌযানগুলো নিরাপদ থাকে বাহিরে বের না হয়। এ ছাড়া বড় বড় বিভিন্ন স্থাপনার উপরও বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। বন্দওে বড় ধরনের সমস্যার জন্য ৩টি টাকবোর্টকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’র পর্যবেক্ষণে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ পৃথক কন্ট্রোল রুম খুলেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহাত মান্নান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি মূলক সভা করা হয়েছে। বিকালে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাইক্লোন শেল্টার গুলি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুজ্জামান ও সিপিপি’র উপজেলা সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলে এ উপজেলার স্কুলসহ মোট ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার দুর্গতদের জন্য প্রস্তুত এবং দুর্যোগের পুর্বে, চলাকালীন ও পরে ৯৯০ জন সিপিপি সেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে লোকজনকে সচেতন, উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারেন। এদিকে সুন্দরবনে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপে’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, আম্ফান’র প্রভাবে সাগরের সুন্দরবন উপকুল সংলগ্ন নদ নদীগুলো খুবই উত্তাল রয়েছে। প্রচন্ড ঢেউয়ের কারণে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো টিকতে না পেরে তীরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির ফলে সকল জেলেরা তাদের নৌযান নিয়ে কালে নিরাপদে আশ্রায় নিয়েছে। ঘুর্নিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্গতদেও উদ্ধার এবং জরুরী ত্রান তৎপরতার জন্য নৌ-বাহিনী ও কোষ্টগার্ড’র পক্ষ থেকে ৭টি জাহাজ ও ৩০টি ছোট ষ্ট্রিট বোর্ট প্রস্তুত রেখেছে। যাতে জরুরী সময় এ নৌযানগুলো কাজে লাগানো যায়।
পুর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, সকল জেলেদের পাশ পারমিট বন্ধ করা হয়েছে, পাশাপাশী ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে, অবস্থা প্রতিকূল না হলে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, পুর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের সকল বন বিভাগের অফিস সমুহের বন রক্ষীদের নিরাপদে থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশী বন বিভাগের ৪০টি নৌযান দুর্গতদের উদ্ধার ও সহায়তার কাজে ব্যাবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।