মোংলায় তিনটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই একাধিক ফাঁটল !

প্রকাশঃ ২০২০-০৫-০৮ - ২১:২০

মোংলা প্রতিনিধি : মোংলায় তিনটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই একাধিক ফাঁটল দেখা দিয়েছে। আর এ ব্রীজ তিনটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাঁটল লাগা স্থান সমুহে দ্রুত সিমেন্ট বালুর প্রলোপ দিয়ে সরকারি কোষাগারের প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে । অভিযোগ উঠেছে-ওই ব্রীজ তিনটি নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ব্রীজের টেকসই ও গুনগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে-২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সরকারের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অধিনে মোংলায় গ্রামীন রাস্তায় সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যেগ নেয়া হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে এ প্রকল্পের আওতাধীন মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নে দু’টি ও সুন্দরবন ইউসিয়নে একটি গ্রামীণ জনপদের মোট তিনটি ব্রীজের কাজ ভাগিয়ে নেয় মেসার্স মাহাতাব এন্টারপ্রাইজ নামের স্থানীয় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম পর্যায় কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের ১৯ আগষ্ট উপজেলার দক্ষিণ চাঁদপাই খানজাহান বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের ওপর ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু করে। প্রায় ১৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় মূল্যের এ প্রকল্পের কাজ একই অর্থ বছরের ২ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময় সম্পন্ন করতে পারেনি। চলতি বছরের মার্চে প্রায় ৫ মাস পর দায়সারা এ সেতুর কাজ শেষ করে ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই পিলারসহ একাধিক স্থানে ফাঁটল দেখা দেয়। জনরোষের মুখে শেষ পর্যন্ত ফাঁটল লাগা স্থান সমুহে কোন মতে সিমেন্ট বালুর প্রলোপ দিয়ে লোক চক্ষুর আড়ালে সটকে পড়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। একই অর্থ বছরে ও প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে কার্যাদেশ পাওয়া ৩২ লাখ ৪১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্যের অপর একটি ব্রীজের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ আগষ্ট । মাকড়ঢোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁশতলা খালের ওপর ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এ ব্রীজটির নির্মাণ কাজেও নেয়া হয়েছে নানা অনিয়মের আশ্রয়। এ ব্রীজের কাজটিও ২০১৯ সালের ১৭ অক্টেবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত সময়ের পর চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল মাসে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। আর গত সপ্তাহে ব্রীজের দুই প্রান্তে মাটি ভরাট ও লেভেল কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকৃত শ্রমিকরা। এরই মধ্যে গত ৪মে বিকালে হঠাৎ করেই ব্রীজের দু’ প্রান্তের পিলার, বেজ, ওয়াল ও স্লাবে ৬/৭টি ফাঁটলের সৃষ্টি হয়। আর ব্রীজটির এ ফাঁটলের বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসলে আশপাশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উত্তেজনা। আর সদ্য নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া এ ব্রীজের ফাঁটল দেয়া দেয়ার বিষয়টির খবর ওই দিনই সন্ধ্যায় পৌছায় উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরে। পরদিন ৫ মে দুপুরে ব্রীজটির বাস্তব অবস্থা পরিদর্শনের সময়সীমা নির্ধারন করেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আর তাদের পরিদর্শনে যাওয়ার খবর পেয়ে ঠিকাদারের শ্রমিক সকাল হতে না হতেই ফাঁটল ধরা স্থান সমূহে সিমেন্ট বালুর প্রলেব দিয়ে কর্তা ব্যক্তিদের নজর এড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে সফলতা অর্জন করেন বলে জানান এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ-এই ব্রীজটি নির্মাণেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রীজের দু’প্রান্ত হতে অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন করা হয়েছে। এতে ব্রীজ সংলগ্ন বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারের অপরিকল্পিত মাটি উত্তোলনে আশপাশের বসতঘর, দোকানপাট খালের মধ্যে ঝুঁকে পড়েছে। এমনকি একটি পরিবারের পারিবারিক কবরস্থানও এখন খালের পেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অপরদিকে সুন্দরবন আইনিয়নের কচুবুনিয়া খালের উপর প্রায় ১৮ লক্ষাধিক টাকার ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের ব্রিজটিতেও ব্যাপক অনিয়ম ও নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র জানায়, মেসার্স মাহাতাব এন্টারপ্রাউজ নামের এ ঠিাকাদরী প্রতিষ্ঠানটি ওই দুটি ব্রীজের প্রাক্কলিত ব্যায় ও বিলের অর্ধকোটি টাকা উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর তাকে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ্যভাবে সহায়তা করছেন।
এ বিষয় বছরের পর বছর মোংলা উপজেলা দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তার নাহিদুজ্জান দাবি করেন, ঠিাকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সিডিউল ও কার্যাদেশের শর্ত অনুযায়ী কাজ করেছে। আর কাজের মান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করেছেন। তবে মাটি খনন কাজে অদক্ষতার অভাবেই প্রতিষ্ঠানটির নির্মানাধীন ব্রীজে ফাঁটল দেখা দেয়। তিনি আরও জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইতিমধ্যে ব্রীজ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান, বিষয়টি প্রকল্পের পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।