মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-২৭ - ১৩:২৭

আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। টানা ২০ দিন ধরে সরকারী এ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নেই। দৈনন্দিন খাবার ও ব্যবহৃত পানির যোগান না থাকায় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুর্ভোগ-দুর্দশা এখন চরমে পৌছেছে। চাহিদার তুলনায় পৌর কর্তৃপক্ষের পানি সরবরাহ কম ও হাসপাতালের পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় পানির এ সংকট দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট মোংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। বন্দর, পৌরসভা ও উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের বিশাল এ এলাকায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ভরসা একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তীব্র গরম আর আবহওয়াজনিত কারণে বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও পানি বাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী আসছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। আর গড়ে ভর্তি থাকছে প্রায় অর্ধশত রোগী। এসব রোগীর সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে এসে বিশুদ্ধ পানির অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়ছেন। রোগীদের খাওয়া, গোসল, হাতমুখ পরিস্কার এমনকি টয়লেটের পানিও মিলছে না। এ অবস্থায় হাসপাতালের বাহির থেকে টাকা দিয়ে সামার্থ্য অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছে কেউ কেউ। অধিকাংশ রোগীরা পানি কিনতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স দিপ্তি মল্লিক বলেন, শুধু রোগীরাই নয়, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সরাও রয়েছেন বিশুদ্ধ পানির এ সংকটের মধ্যে। অপারেশন ও ডায়রিয়াসহ অন্য জটিল রোগীদের চিকিৎসা শেষে হাত-মুখ পরিস্কার করার জন্যও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে পানির এ ভয়াবহ সংকট চলছে বলেও জানান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পানির একমাত্র উৎস হাসপাতাল পুকুর ও একটি গভীর নলকুপ। পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং নলকুপের পানি লবণাক্ত হওয়ায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের পাইপ লাইনে সরবারহকৃত পানির পরিমাণও পর্যাপ্ত নয়। দূর-দুরান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীরা বাহির থেকে পুকুর-ডোবা-নালা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার পানি সংগ্রহ করছে। আর যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের কেউ কেউ বোতলজাত কিনে ব্যবহার করছে। হাসপাতালে আগত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবহৃত পানির অভাবে তারা গোসল ও টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না। এ কারণে হাসপাতালের টয়লেট ও অভ্যন্তরে নোংড়া, দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনকি ডায়রীয়ায় আক্রান্ত রোগীদের স্যালাইন মেশানোর জন্যও কোন পানি সরবরাহ করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ পাইপলাইনের মাধ্যমে যে পানি সরবরাহ করছে তা প্রয়োজনের তুলনা খুব কম। এ পানিতে রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দুই ঘন্টার চাহিদাও পূরণ হয় না। অপরদিকে হাসপাতালের পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। যে কারণে হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে উল্লেখ্য করে তিনি আরো বলেন, আগামী বছর ছাড়া চলতি বছরে পানির এ সংকট নিরসন কোনভাবেই সম্ভব নয়।