যশোরে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জুয়েল প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত

প্রকাশঃ ২০২০-০১-৩০ - ১৭:৫২

যশোর : যশোরে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী জুয়েল নিহত হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর বাজারের অদূরে মিজানুর রহমানের ডেইরি ফার্ম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জুয়েল হাশিমপুরের মৃত আমজেদ মোল্যার ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রগুলি উদ্ধার করেছে। জুয়েলের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। তাছাড়া তার ছোট ভাই বাবলা ও খালু বুলি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
জানা গেছে, বুধবার সকালে কক্সবাজার সদর থানার কলাতলী রোডের অভিযান চালিয়ে জুয়েলকে পুলিশ আটক করে। সে আনসার সদস্য হোসেন আলী হত্যামামলার পলাতক আসামি।
পুলিশ তাকে কক্সবাজার থেকে যশোরে নিয়ে আসে। হোসেন আলী হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বুধবার গভীর রাতে যশোর ডিবি পুলিশের ইনচার্জ মারুফ আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি টিম হাশিমপুর বাজারে যায়। এসময় জুয়েল ও মুন্নার নব সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদেরকে লক্ষ্যকরে এলোপাতাড়ীভাবে গুলিবর্ষল করে। তখন পুলিশও নিজেদের জানমাল ও সরকারি অস্ত্রগুলি রক্ষার্থে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে অনুমান ১০/১২ মিনিট গোলাগুলির পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়কালে দৌড়াদৌঁড়ি করে আড় নেয়ার সময় জুয়েল কৌশলে যশোর-মাগুরা গামী মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে জনৈক সাইফুল ইসলামের ধানি খালি ক্ষেত দিয়ে পূর্ব দিকে দৌঁড় মারে তখন দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নব্য সর্বহারা মুন্না বাহিনীর অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীর ছোড়া গুলিতে জুয়েল গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে সন্ত্রাসী জুয়েলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তৎক্ষণিকভাবে সন্ত্রাসী জুয়েলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পুলিশ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর ডাক্তার পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি দেশি ওয়ান স্যূটার গান, ১ রাউন্ড রিভলবারের গুলি, ২টি রামদা, ২টি হাসুয়া ৩ জোড়া সেন্ডেল উদ্ধার করা হয়। জুয়েলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ৬টি, ডাকাতি মামলা ১টি, অস্ত্র মামলা ৫টি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ১টি, চাঁদাবাজি ১টি এবং মাদকদ্রব্য ২টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নটি যশোরের চরমপন্থীদের মূল ঘাটি ছিল। ঐ এলাকা থেকে ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পন করলেও জুয়েলের পিতা জমসেদ ও খালু বুলিসহ অধিকাংশ লোক অস্ত্র জমা না দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। চরমপন্থীদের ব্যবহৃত জমা না দেয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র ১৯৯৭ সাল হতে হাশিমপুর এলাকার সন্ত্রাসীদের নিকট ব্যবহৃত হতে থাকে। বসত বাড়িতে ডাকাতি, রোড ডাকাতিসহ ভাড়াটে খুনের কাজে ঐ সকল অস্ত্র ব্যবহৃত হতো। জুয়েলের বাবাসহ কয়েকজন বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়। ঐ এলাকায় চেয়ারম্যান মোশাররফ হত্যাকান্ড বর্ণিত সন্ত্রাসী বাহিনীর আন্তঃকোন্দলে সংঘঠিত হয়। এ এলাকার অন্যতম সšা¿সী ক্যাডার আসকার। আসকার কোতয়ালী ও বাঘারপাড়া থানায় দুই ডজনের বেশি মামলা আছে। হাশিমপুর এলাকায় চরমপন্থীদের অস্ত্র জমা দেয়ার পর যে সকল অস্ত্র জমা দেয়নি সেই সকল অস্ত্র সন্ত্রাসী বুলির হেফাজতে ছিল। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে সন্ত্রাসী বুলি মারা যায়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসী বুলির ছেলে মুন্না ও বুলির ভায়রার ছেলে জুয়েল একটি ২০/২৫ জনের ক্যাডার বাহিনী গঠন করে এবং এ বাহিনী জুয়েলের নেতৃত্বে এলাকায় সকল ধরণের অপকর্মে লিপ্ত থাকে। অস্ত্র কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে হাশিমপুর বাজারের আনসার সদস্য হোসেন আলী মার্ডার হয়। ক্যাডার বাহিনীর প্রধান জুয়েল একটি ওয়ান শুটারগান বুকে ঠেকিয়ে ধরে গুলি করে ছুটিতে থাকা আনসার সদস্য হোসেন আলীকে হত্যা করে। গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসী জুয়েল এলাকায় চরম নৈরাজ্য চালাচ্ছিল।