রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নির জামিন, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ

প্রকাশঃ ২০১৯-০৮-২৯ - ১৫:৩১

বরগুনা : বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিনের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে, জামিনে থাকাকালীন গণমাধ্যমের সামনে কথা না বলার নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে তার জামিন বাতিল হবে। আর জামিনে থাকা অবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের জিম্মায় থাকবেন।

এ সময়, রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে কাছে বরগুনা পুলিশ সুপারের দেয়া বক্তব্য দুঃখজনক ও হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট। এসপির দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত বলেন, ‘আসামি ধরেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে অতিউৎসাহী হয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত দ্বারা দোষী সাবাস্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না সে অপরাধী।’ একই সঙ্গে, গণমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য দেয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দেন।

এদিকে, মিন্নির জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষোণা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না, তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মশিউর রহমান, মাক্কিয়া ফাতেমা, জামিউল হক ফয়সাল। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।

গতকাল বুধবার, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মিন্নিকে জামিন দেয়ার বিষয়ে রুলের শুনানি শেষ হয়। এ সময়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির হাইকোর্টে মামলার তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেন।

এর আগে, রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রধান সাক্ষী তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া, বরগুনার এসপিকে মিন্নির দোষ স্বীকার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

গত ৫ই আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে জামিন আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না।

রিফাত হত্যায় জড়িত থাকা সন্দেহে গত ১৬ই জুলাই সকাল পোনে দশটার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে মিন্নিকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। পরের দিন, বিকেল সোয়া তিনটার দিকে কারাগার থেকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে নেয়ার ৪৮ ঘন্টা পরেই ১৯শে জুলাই বেলা দুইটার দিকে মিন্নিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়। একইদিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে মিন্নি বরগুনা কারাগারে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬শে জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে নেয়ার পর সেখানেই রিফাত শরীফ মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।