রূপসায় ধান ক্ষেতে হাস্যোজ্জ্বল এক কৃষকের গল্প

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-১৮ - ২০:২৯

মোঃ আবদুর রহমান : জমির পরিমাণ মাত্র ৪ বিঘা। এ জমিতে বোরো ও আমন মৌসুমে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করে জীবিকা চলে ইসলাম সরদারের। রূপসা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের তুরফান সরদারের ছেলে ইসলাম সরদারের বয়স প্রায় ৬৮ এর কাছাকাছি। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ইসলাম সরদারের সুখের জীবন।
আমন ও বোরো মৌসুমে বেশি ফলনের জন্য তিনি দেশি জাতের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেন । সুস্থ ও সবল চারা উৎপাদনের জন্য ইসলাম সরদার আদর্শ বেড পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করেন । এ পদ্ধতিতে বীজতলার চারার যত্ন-পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন এবং পানি সেচ ও নিষ্কাশনে সুবিধা হয় বলে তিনি জানান। উর্বরতা বজায় রাখার জন্য তিনি জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সারও ব্যবহার করেন । তিনি বোরো মৌসুমে হিরা-২ ও ব্রিধান-৬৭ এবং আমন মৌসুমে ব্রিধান-৭১, ব্রিধান-৭৫ ও ব্রিধান- ৮৭ জাতের ধান চাষ করেন ।
ব্রিধান -৮৭ অধিক ফলনশীল জাতের একটি রোপা আমন ধান । এ জাতের ধানের চাল লম্বা ও চিকন হওয়ায় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। রূপসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে এবছর ইসলাম সরদারের ৩৩ শতক জমিতে ব্রিধান-৮৭ জাতের রোপা আমন ধানের একটি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়। এজন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় বীজ ও সারসহ আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ পনের শ’ টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে । স্থানীয় উপ-সহকরী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান এর পরামর্শে তিনি সুষম মাত্রায় সার ব্যবহারের পর সারি ও লোগো পদ্ধতিতে প্রদর্শনীর জমিতে ২৫ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করেন। এরপর ভালো ফলনের আশায় নিবিড় পরিচর্যা যথা- সময়মতো আগাছা দমন , ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ, পানি সেচ এবং পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা করে চলেছেন। ইতোমধ্যে ব্রিধান-৮৭ জাতের ধানের চারাগুলো কুশি থেকে কাইচ থোড় ও থোড়ে রূপান্তরিত হয়েছে। আমন ধানের সবুজ রঙে ভরে গেছে পুরো ক্ষেত । এজাতের ধানের বাড়-বাড়তি দেখে ইসলাম সরদারের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে । এধান থেকে ভালো ফলন পাবেন বলে তিনি মনে করেন। তাই পরিচর্যা শেষে ধান ক্ষেতে তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
আদর্শ কৃষক ইসলাম সরদার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যে কোন উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহারে যেমন আগ্রহী , তেমনি এলাকার কোন কৃষি বিষয়ক সমস্যায় অন্য কৃষকদেরও পরামর্শ দিয়ে সেবা করে থাকেন । এতে সমাজে তার মর্যাদা বেড়েছে, পরিচিতি পেয়েছেন একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে । তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং তাদের মাঝে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে । সর্বোপরি, ইসলাম সরদার নিঃসন্দেহে আগামী দিনের ধান চাষিদের জন্য একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন বলে আমরা মনে করি।

লেখক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস , রূপসা, খুলনা।