সমুদ্রে বিলীন হওয়ার হুমকিতে চট্টগ্রাম

প্রকাশঃ ২০২০-১০-০৩ - ১৬:৩৫

সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দৈনন্দিন জীবনে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য জোয়ারের সময় জানাটা একেবারেই জরুরি। সঙ্গে থাকা চাই পঞ্জিকা অনুসারে জোয়ারের পূর্বাভাস তালিকা। ডাঙ্গায় বসবাস করে স্কুল বা অফিসগামী মানুষের জন্য এমন তালিকার প্রয়োজনীয়তা শুনতে আশ্চর্য ঠেকলেও, আগ্রাবাদের বাসিন্দাদের জানতেই হয় কখন জোয়ার আসবে। আর সেই পানিতে ডুবে যাবে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়ির নিচতলা।  এক সময় চট্টগ্রামের ধনী এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের আবাসিক এলাকা বলে পরিচিত এলাকাটিতে এটাই এখন বাস্তবতা।

জোয়ারের স্রোতে যখন মহল্লা ডুবে যায়, তখন নিজ বাড়িতেই গাদাগাদি অবস্থান করতে বাধ্য হন এলাকাবাসী। জোয়ার সরে না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণমানুষ চলাচল করেন না। এছাড়া, একটু বেশি নিচু জায়গাগুলো দিনে কমপক্ষে ছয়ঘণ্টা জোয়ারের পানিবন্দী থাকে।  ”জোয়ারের পানি কমপক্ষে তিনঘণ্টা থাকে। এজন্য আমরা জোয়ারের পূর্বাভাস-সহ ক্যালেন্ডার ঘরে রাখি। আমাদের প্রতিটি দিনের শুরু সেই মাফিকই হয়,” বলছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অভিজাত এলাকাটির এক বাসিন্দা জসীম উদ্দিন।

এভাবেই প্রতিদিন দুইবার বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জোয়ারের স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপনের চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। তবে আগ্রাবাদ একা নয়, জোয়ারের কারণে মহানগরীর প্রায় ৬৯ শতাংশ মহল্লা নানা সময়ে কম-বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। এ তথ্য জানাচ্ছে খোদ গণপূর্ত অধিদপ্তরের জরিপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের ঠিকানা চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অস্তিত্ব রক্ষায় নগরীর নিজস্ব কিছু সংগ্রাম রয়েছে, বলেই জানান তারা।  যেমন ধরা যাক, আগ্রাবাদের কথাই। এই এলাকার উচ্চতা সাগরপৃষ্ঠ থেকে দশমিক ৪২ মিটার উচ্চতায়। কিন্তু, প্রতিদিন যে জোয়ারের যে ঢেউ আসে তার উচ্চতা কমপক্ষে ২.৫১ মিটার। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

বসন্তকালীন সময় জোয়ারের পানির ২.৭৬ মিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। নতুন চাঁদের সময়, পুর্ণ চাদনী রাতে বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চলাকালে; যখন স্রোতের উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় আরও এক বা দুই মিটার ছাড়িয়ে যায় তখন অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে।

বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত কর্ণফুলী নদীতে আসা ২.৫১ মিটার উচ্চ জোয়ারের কারণে ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলের অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

উচ্চবিত্ত এবং স্বচ্ছল পরিবারের লোকজন তাদের ঠিকানা বদলেছেন চাঁদগাঁও এবং খুলশীর আবাসিক এলাকাগুলোয়। ফলে আগ্রাবাদের কর্ণফুলী নদী তীরে ৮২.১৮ একর জমির উপর নির্মিত আধুনিক আবাসিক এলাকা এখন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। বন্যার পাশাপাশি সমুদ্রের পানির বয়ে আনা লবণাক্ততা শহরের নানা অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি করে।

সাম্প্রতিক সময়ে, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সাইফুদ্দিন মালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে সেখানে ধরে রাখা জমা করে রাখা বৃষ্টির পানি ছাড়া হচ্ছে। ২২ নং রোডে প্রায় ৫,৪০৮ বর্গমিটার জমিতে নির্মাণ করা বাড়িটির কাঠামো এভাবেই রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি।

মালেক জানান, ”জোয়ারের স্রোত রুখতে আমরা ৩০ লাখ টাকা খরচ করে একটি সীমানা দেওয়াল তৈরি করেছিলাম। কিন্তু, তারপরও আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।” আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৈরি (সিডিএ) আবাসিক এলাকাটিতে ১৯৬০ দশক থেকেই ধনীদের বসবাস। উচ্চ-পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সুপরিচিত ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদেরা এ এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

কোটি টাকার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন মালিকেরা : 
সিডিএ আবাসিক অঞ্চলে ২১ নম্বর রোডের দুটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে এক সময় প্রাক্তন মন্ত্রী মরহুম এল কে সিদ্দিকী এবং তাঁর স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দিকীর আবাস ছিল।  ১৯৭৭ সালে প্রায় ৩,৩৮০ বর্গমিটার জমিতে বাড়ি দুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এখানেই বসবাস করেছেন সিদ্দিকী দম্পত্তি। কিন্তু, সম্প্রতি ২০১৮ সালে বাড়ি দুইটি সম্পূর্ণরূপে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাদের উত্তরাধিকারীরা।

এল কে সিদ্দিকীর বড় ছেলে আসসান সিদ্দিকী বলেন, ”১৯৯২ সালে যখন বাড়িগুলোর নিচতলায় পানি ঢোকা শুরু করেছিল, তখন আমরা ঢাকা গিয়ে বসবাস শুরু করি। মাঝেমাঝে চট্টগ্রামে আসলে তখন বাড়িদুটি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু, গত ১০ বছরে জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

২১ নম্বর সড়কের আরেক বাসিন্দা সাবেক নাবিক এবং জাহাজীকরণ ব্যবসায়ী মীর রেজওয়ান হোসেইন টিপু – ১৯৭৬ সালে ১,৫২১ বর্গ মিটার জমিতে তার বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯০ এর দশকের আগে আমরা কখনও বাড়িতে পানি ঢোকার এই সমস্যার মুখে পড়িনি। ওই সময় থেকেই প্রতিবছর এলাকার পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তখন আমরা নিচতলাগুলোকে উঁচু করে সেই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করি। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ আমি বাড়ির নিচতলা কমপক্ষে পাঁচফুট উঁচু করিয়েছি, কিন্তু তারপরও প্রতিবছর পানির উচ্চতা যেভাবে বাড়ছে- তাতে এ চেষ্টা বৃথা বলেই মনে হচ্ছে।”

”চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাবা-মা এবং আমার শৈশবের অসংখ্য স্মৃতি-বিজড়িত সেই বাড়িটি চিরতরে ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এখন পরিবারসহ ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছি।”  বাড়ির মালিকরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকারও হচ্ছেন। ওই এলাকার সব বাড়ির মালিকের সংখ্যা ১৫শ’ জন। নিজেরা অন্যত্র চলে গেলেও বাজারমূল্যের চাইতে অনেক কমদামে বাড়ি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

সিডিএ মূখ্য প্রকৌশলী কাজি হাসান বিন শামস বলেন, ”গত বছরই আমরা ওই এলাকার সড়ক তিন ফুট উঁচু করেছি। তারপরও, এবছর তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই আবাসিক এলাকায় জোয়ারের পানিই বড় সমস্যা। এজন্য আমরা মহেশখালে একটি জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে এলাকাটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

রক্ষা পায়নি আগ্রাবাদের বাণিজ্যিক এলাকাও :
আগ্রাবাদের বাণিজ্যিক এলাকায় নগরীর বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দপ্তর। যার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। বন্দর নগরীর এসব প্রতিষ্ঠান জোয়ারের পানিতে প্রভাবিত হচ্ছে।  ২০১৬ সালে চালু হওয়া বাণিজ্য ট্রেড সেন্টারে গত দুই-তিন বছর ধরেই পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। আর গত বছর জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকায় প্লাবিত হয়।

”আগ্রাবাদের বাণিজ্যিক এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া আমি দুই বছর আগেও দেখিনি। আর ট্রেড সেন্টারের সামনে পানি জমার বিষয়টি তো কল্পনাই করতে পারি না। গত দুই বছরে আমরা অভিজাত এ বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সামনের রাস্তা পানিতে ডুবে যেতে দেখছি,” বলছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সে কারণে আসা উঁচু জোয়ার শুধু নাগরিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে না, বরং ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসাগুলোতে।

একারণে, দেশের বৃহত্তম পাইকারি পণ্য বাজার খাতুনগঞ্জ এবং আসাদগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য নষ্টের কারণে কমপক্ষে ১,০০০ কোটি টাকা বাৎসরিক ক্ষতি হচ্ছে, বলে দাবি করেছে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজ অ্যাসোসিয়েশন।

নোনা জলের প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত নগরীর অন্যান্য এলাকা : 
সমুদ্রের পানির উচ্চতা চট্টগ্রাম নগরীর ১৮ শতাংশ এলাকায় ০.৫ – ২.৫ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে; আগ্রাবাদে সিডিএ’র তৈরি আবাসিক এলাকা, পূর্ব বাকালিয়া, দক্ষিণ বাকালিয়া, হালিশহর, শোলকবাহার, মুরাদপুর, মোহরা এবং বাহাদুরাঘাট অঞ্চল। দৈনিক এসব এলাকা প্লাবিত করা জোয়ারের পানির গড় উচ্চতা ২.৫ থেকে ২.৭৬ মিটার।  তাছাড়া, মৌসুমি বৃষ্টি, নতুন চাঁদ উঠার কালে, পূর্ণ চাঁদনী রাতে এবং সাইক্লোনের সময়ে ৫১ শতাংশ এলাকায় পানির স্তর ২.৫ – ৪.৫ মিটার পর্যন্তও বাড়ে।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং প্লাবন প্রতিরোধ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী জানান, চান্দাগাঁও, মোহরা, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চকবাজার, পতেঙ্গা অঞ্চল জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায়।

হালিশহর সংলগ্ন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আরেকটি আবাসিক এলাকাও :
প্লাবিত হচ্ছে চট্টগ্রামের অবস্থিত মা ও শিশু হাসপাতাল, সবুজবাগ আবাসিক এলাকা এবং সিডিএ আবাসন প্রকল্প সংলগ্ন হালিশহরের কিছু অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা এ প্লাবনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার ফলে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে শোলকবার এলাকা, কারণ সাগরপৃষ্ঠ থেকে সেখানকার উচ্চতা মাত্র দশমিক ১৯ মিটার, সেখানে আসা জোয়ারের গড় উচ্চতা ২.৫০ মিটার। আর ২০০৫ সালের পর থেকেই হালিশহরের আবাসিক এলাকা জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।

হালিশহর কে এবং এল ব্লকের সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রেসিডেন্ট গোলাম মোস্তফা বলেন, ২০০৫ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে পানি আসা শুরু হয়। এখন এলাকাটি কমপক্ষে এক থেকে দেড় মিটার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। একারণে এলাকায় বাড়িভাড়া কমপক্ষে ৪০ – ৫০% কমে গেছে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামের মাত্র ২২ শতাংশ মহল্লার উচ্চতা পাঁচ থেকে ৩০ মিটার। এসব এলাকা এখন পর্যন্ত জোয়ারে প্লাবিত হওয়া থেকে সুরক্ষিত। তাছাড়া, পাহারি জমির ৯ শতাংশ এলাকার উচ্চতা ৩০ থেকে ৯০ মিটার। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা জানায়, আগামী এক শতাব্দী জুড়ে হিমবাহ গলে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৪.০১ মিটার বাড়ার কারণে সম্পূর্ণ ডুবে যাবে চট্টগ্রাম।

প্রতিবছর বন্দর নগরীর নতুন নতুন এলাকা জোয়ারের পানির কবলে পড়ছে। আর জোয়ারের উচ্চতাও নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ছে। চলতি বছরের গত ২১-২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো জোয়ারের পানি চট্টগ্রাম বন্দ্রের বিভিন্ন জেটি প্লাবিত করে। যাতে করে পণ্যে ক্ষতি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন আমদানি-রপ্তানি কারক ব্যবসায়ীরা। গত ২১ আগস্ট কর্ণফুলী নদীতে আসা জোয়ারের উচ্চতা ৪.৮১ মিটার উচ্চতা লাভ করে। পরের দিন আসা জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৪.৬৬ মিটার।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন :
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. রিয়াজ আক্তার মল্লিক জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি চট্টগ্রাম নগরীকে মারাত্মক রকম প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, ”প্রতিবছর যেমন (সাগরের) পানির উচ্চতা বাড়ছে, একইসঙ্গে পানি নেমে যাওয়ার মতো নিম্নাঞ্চল (জলাভূমির) সংখ্যা কমছে। গত কয়েক দশকে এমন এলাকার সংখ্যা ৫০% হ্রাস পেয়েছে।”

”জোয়ারের পানি যেন শহরে প্রবেশ না করতে পারে এজন্য জোয়ার নিয়ন্ত্রণে টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণে গতি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জোয়ারের পানি ধারনে শহরে জলাধার নির্মাণ করাটাও জরুরি,” জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ একেএম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ”কর্ণফুলী নদীতে যেন জোয়ারের পানি বেশি পরিমাণে নিষ্কাশন করা যায় এজন্য নগরীর জলাশয় এবং খালগুলোর পাশে জেনারেটর-সহ পাম্প বসানো উচিৎ।” এছাড়া আরও বেশি সবুজ এলাকা এবং খালের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।

জোয়ারের পানি নিস্কাশনে সরকারি পদক্ষেপ : 
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্ণফুলী নদী হয়ে চট্টগ্রাম শহরে জোয়ারের পানি অনুপ্রবেশ বন্ধে ৪০টি স্রোত নিয়ন্ত্রক (টাইডাল রেগুলেটর) বসানোর কাজ করছে। শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে এর মধ্যে পাঁচটি রেগুলেটর স্থাপন আগামী বছরের মধ্যেই ‘খাল পুনঃখনন, সংস্কার এবং উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় শেষ হবে- জানান প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহামদ্দ শাহ আলী।

এছাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১,৬২০ কোটি টাকায় ”চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন” শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আওতায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দর, মহেশখাল, শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট এবং হালদা নদীর মুখে আরও ২৩টি টাইডাল রেগুলেটর স্থাপন করা হবে।

এছাড়া, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও চাক্তাই খাল এবং রাজাখালে আরও ১২টি রেগুলেটর বসানোর কাজ করছে।  অধ্যাপক মল্লিক জানান, নিস্কাশন নালায় যেন বর্জ্য না ফেলা হয়- সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতেও একটি কার্যকর ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এমনটা না করা হলে, ‘ শুধু স্রোত নিয়ন্ত্রক বসানো কোনো কাজে আসবে না’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।