সাতক্ষীরায় প্রকাশ্যে চালাচ্ছে চিংড়ীতে অপদ্রব্য পুশ!!!

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-৩০ - ১৬:০৭

রবিউল ইসলাম রবি, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ব্যাংদহা সেটে চিংড়ী ব্যবসায়ী কমিটির প্রধান বিধার ও স্বপনের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে চলছে চিংড়ীতে অপদ্রব্য পুষ বানিজ্য, দেখার যেন কেউ নেই। সাতক্ষীরা সদরের ব্যাংদহা বাজার সংলগ্ন সেট গুলোতে বাগদা চিংড়ি ক্রয় করে প্রকাশ্যে সুই সিরিন্স ব্যবহার করে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুষ করছে।

কখনও খুদে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দুই থেকে দশ ক্যারেট পর্যন্ত মাছ পুশ করিয়ে বড় ডিপো গুলোতে আনা হচ্ছে। ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মদদ দিচ্ছে ব্যাংদহা বাজারের বড় মাছ ব্যবসায়ী বিধান, স্বপন, রঘুনাথ, দিপক , সঞ্জিত, জয়দেব আরও অনেকে। সুই সিরিন্স এর মাধ্যমে তারা চিংড়িতে ঢুকাচ্ছে ভাতের মাড়, সাবু,বাল্লি জ্বালানো, ফিটকিরি, ময়দা রান্না, সাদা পানি ও বিভিন্ন ধরনের জ্বেলি।

এই ভাবে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুষের কারনে চিংড়ি সম্পূর্নভাবে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। বুধবার সকাল ৯ টায় সরেজমিনে দেখা গেল ব্যাংদহা সেটে ১০ জন ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে মাছের ঘরে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুষ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চিংড়িতে অপদ্রব্য পুষ করলে চিংড়ি রপ্তানি করার জন্য বেশ কিছু সময় দেরি হয়ে যায়, তার মধ্যে চিংড়িতে পোকা হয়ে যায়। তখন সেটা সম্পূর্ণভাবে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে ওঠে। ফলে সেটা বিদেশের বাজারে প্রকৃত বাজার মূল্য হারায়। সূত্রটি আর ও জানায়, চিংড়িতে অপদ্রব্য পুষের কারণে উহার জনপ্রিয়তা ও বাজার মূল্য সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হচ্ছে। সূত্রটি থেকে আরও জানা যায়, এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিন চিংড়ি বানিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্খা রয়েছে। সচেতন মহলের ধারণা হঠাৎ চিংড়ি বানিজ্য বন্ধ হলে কমপক্ষে ০৫ বছরের মধ্যেই চিংড়ি চাষকৃত এলাকায় কোন ধান্য ফসল উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আমাদের বাংলাদেশের চিংড়ি গুলো বর্তমান ভারতের নামে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। চিংড়ি অপদ্রব্য পুষের কারনে বিদেশ যেতে যেতে চিংড়ি গুলো একদিকে যেমন সোগা হয়ে যায় অন্যদিকে খাওয়ার পরিবর্তে এটা বর্জ্যে পরিণত হয়। এ বিষয়ে চিংড়ী ব্যবসায়ী বিধানের সাথে সরাসরি কথা বললে, তিনি বলেন আমরা মাছে পুষ করছি না। আপনি লেখেন যত পারেন। শত ইচ্ছা থাকলেও পুষ বন্ধ করতে পারবেন না। পারলে আপনাকে পুরস্কৃত করা হবে।

এলাকার সচেতন মহল আশা করছে এক সময় বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার ব্যাংদহা বাজার কে সাতক্ষীরার কুয়েত নামে অবিহিত করা হত। পুষ বানিজ্য চলার কারণে এটার জনপ্রিয়তা দিন দিন হারাচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেল, ব্যাংহদা সেটের পাশ্ববর্তী এল্লারচর সংলগ্ন অসংখ্য বাড়িতে একাধিক সুই সিরিন্স সাবু জ্বালানো, ফিটকিরি, ভাতের মাড়, ময়দা রান্না ও সাদা পানির সন্ধান মিলেছে। একইভাবে ব্যাংদহা সেটের পাশ্ববর্তী অসংখ্য বাড়ীতে মাছ কেনার পরে ব্যবসায়ীরা পুষ করার জন্য মহিলাদের জন ধরে পুষ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতি ২ ঘন্টায় মহিলারা মজুরী পাচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এক এক কেজি বাগদা চিংড়ি বিক্রয় করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ বাড়িতে পুষ করার জন্য পাকা চাতাল করে ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে এই ধরনের অপকর্ম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ক্ষুদি ব্যবসায়ী জানিয়েছে, চিংড়ী অপদ্রব্য পুষ করলে তা ওজনে বেশি হয়। ফলে ৩০ গ্রেডের মাছ পুষ করে ফুলিয়ে ফাপিয়ে ২৫ গ্রেড করা সম্ভব। এভাবে ৩৬ গ্রেডের মাছ পুষের মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাপিয়ে ৩০ গ্রেড করা সম্ভব। বিধান ও স্বপন বর্তমানে ২০-৩০ মন মাছ ক্রয় করে মহিলাদের জন ধরে ঘরের ভিতর পুষ করে।আবার কখনও সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা ১ মন ২ মন করে পুষ করা মাছ আনতে থাকে। ৯ টায় ঘের থেকে মাছ ক্রয় করে ২০-৩০ জন মহিলাদের মাধ্যমে সুচ সিরিজ ক্রয় করে উপরোক্ত আইটেম দিয়ে মাছের শিরা উপশিরা ভরিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে অসংখ্যা ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এ প্রতিবেদক কে জানিয়েছে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা আমাদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিয়ে যায়। পুষের ক্ষতিকারক বিষয়ে একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে সে বলেছে পুষ করার কারণে দশ থেকে পনের দিন পরে বাগদা খাওয়ার একবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং দূর্গন্ধ ছড়ায়, পোকা ধরে।

৪০ কেজি চিংড়ী ক্রয় করলে ফুলিয়ে ফাপিয়ে পরে তা প্রায় ৫০ কেজির মত বানানো হচ্ছে। এতে বিধান ও স্বপন নব্য কোটিপতি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের বাড়ীতে বাগদা চিংড়ীতে পুষ করার জন্য স্পেশাল চাতাল তৈরি করেছে। ১৫-২০ জন মহিলাদের মাধ্যমে চিংড়ীতে পুষ করে ওজন ভারী করে পিকআপ বোঝাই করে সরাসরি কোম্পানীর ঘরে তার কর্মচারীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

তবে এলাকার খুদে ব্যবসায়ীরা প্রতিবেদককে জানিয়েছে যদি কোম্পানি পুষ করা চিংড়ি গ্রহণ না করেন তাহলে আমরা পুষ করা বন্ধ করে দিতাম। পুষ করা মাছ থাকা অবস্থায় ফোন দিলে মাছ গুলো দ্রুত স্থান ত্যাগ করানো হয়। এ ব্যাপারে সদর থানার নিবার্হী অফিসার তহমিনা সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি তথ্য দিলেন বিষয়টি আমাকে দেখতে হবে। আমি দেখব। এ বিষয়ে গোয়েন্দা অফিসার ইনচার্জ এর নম্বরে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার জ্ঞানী, গুনি ও সচেতন মহল।