সুন্দরবনে থেমে নেই জেলে-বাওয়ালীসহ বনজীবি অপহরণ

প্রকাশঃ ২০১৮-০৪-০১ - ১৭:৫১

আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : আসত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সুন্দরবনের বনদস্যু বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেলেও থেমে নেই দস্যুতা। র‌্যাব-৮ এর প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের জেলে ও বনজীবীদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক আরও ৩টি বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আজ রবিবার আত্মসমর্পন করছে। সুন্দরবন দাঁপিয়ে বেড়ানো বনদস্যু ডন, ছোট জাহাঙ্গীর ও সুমন বাহিনীর ২৭ জন সদস্য আজ সকাল ১১টায় বাগেরহাটের স্বাধীনতা উদ্যানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা বারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পন করবেন। র‌্যাব-৮ ও বাগেরহাট জেলা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সুন্দরবনে গত ৩ বছরে ২০টি বনদস্যু বাহিনীর ২শ ২৭ জন সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পন করলেও এখনও থামেনি জেলে-বাওয়ালী, মৌয়ালীসহ বনজীবীদের মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণ বাণিজ্য। আত্মসমর্পন করা বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাহিনীগুলোর দলছুট সদস্যরা নতুন নামে নতুন নতুন বাহিনী গঠন করে নেমে পড়ছে দস্যুতায়। সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় জেলে বহরে হানা দিয়ে মাছ লুট ও অপহরণের ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুধু মার্চ মাসে বনদস্যুদের হাতে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলেদের মুক্তিপণের দাবীতে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে গত ২৮ মার্চ পূর্ব সুন্দরবনের বনদস্যু ছোট্ট বাহিনীর হাতে জিম্মি থাকা তিন জেলে মুক্তিপণ দিয়ে ৬দিন পর ছাড়া পেয়েছেন। জেলে ও মহাজনেরা বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ভাইজোড়া খালে স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সাথে অজ্ঞাত বনদস্যুদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আধ ঘন্টা গুলিবিনিময় শেষে ঘটনাস্থল থেকে বনদস্যুদের ব্যবহৃত ১টি নৌকা ও ২টি মোবাইল সিম উদ্ধার করে স্মার্ট টিমের সদস্যরা। গত ৩ মার্চ পূর্ব সুন্দরবনে বনরক্ষী ও কোষ্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৭ জেলে, ৩টি ফিশিং ট্রলার ১টি নৌকা উদ্ধার হয়েছে। এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের গাতারখাল এলাকায় বনদস্যু মামা-ভাগ্নে বাহিনীর জিম্মিদশা থেকে ওই জেলেদের উদ্ধার করা হয়। একইদিন দুপুরে কটকা বনরক্ষী এবং ওই বনদস্যু বাহিনীর মধ্যে প্রাায় আধ ঘন্টা ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় বনরক্ষীরা বনদস্যুদের কবল থেকে ৬ জেলেকে ৪টি মাছ ধরা নৌকা উদ্ধার করেন। এ নিয়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩ জেলে, ৩টি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও ৫টি মাছ ধরা নৌকা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ১৩ জেলের বাড়ী খুলনার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরা, বরগুনার পাথরঘাটা ও বাগেরহাটের ফরিকহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাামে। এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মাহামুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনে দস্যুতা অনেকাংশেই কমে গেছে, এক কথায় তেমন নেই বললেই চলে। তারপরও বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দুই একটি বাহিনীর কথা শুনা গেলেও তারাও স্বল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো আত্মসমর্পন না হলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নির্বৃত হয়ে যাবে বলে আশা করছি।