সুন্দরবনে নিবিড় পরিচর্যায় সুস্থ্য জুলিয়েট

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১৯ - ১৮:৫৯

মোংলা প্রতিনিধি : নিভির পরিচর্যার পর অবশেষে সুস্থ্য হলেন বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রে লালিত জুলিয়েট। গত ২৩ জানুয়ারী সুন্দরবনের প্রজনন কেন্দ্রে করমজলের কুমির জুলিয়েট একটি প্রানীকে শিকার করে খাবারের চেষ্টা করলে পিছন থেকে কুমির পিলপিল জুলিয়েটকে আক্রমন করে। এতে তার শরীরে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরে।
সুন্দরবনের করমজলের এক মাত্র বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রের একটি পুকুরে কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও রোমিও বসবাস করতো। এর মধ্যে পুরুষ কুমির রোমিও বয়স বেশী ও শারীরিক ভাবে অক্ষমতা হওয়ায় তাকে অন্য একটি পুকুরে আলাদা করে রাখা হয়েছে। বংশ বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য ২০১৮ সালে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক থেকে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডাকে আনা হয় স্ত্রী কুমির পিলপিল ও জুলিয়েট’র জন্য। এ ৩টি কুমির এক সাথে পুকুরে বসবাস করছে।
বন বিভাগের পর্যটক ষ্পট করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, স্ত্রী কুমির পিলপিল ও জুলিয়েট তাদের বন্ধু আলেকজান্ডারকে নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এরই মধ্যে জুলিয়েটের সংঙ্গে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডারের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা গভীর হওয়ায় প্রায় সময়ই জুলিয়েটকে আড়াল চোখে দেখতো পিলপিল। পুকুরের মধ্যে এ দুজনের সাথে প্রায় সময়ই মারামারী লেগেই থাকতো।
২৩ জানুয়ারী সকালের দিকে জুলিয়েট একটি বানরকে শিকার হিসেবে কাছে পেয়ে পাড় থেকে টেনে পুকুরের মাঝে নিয়ে যায়। এসময় অন্য স্ত্রী কুমির পিলপিল পিছন থেকে জুলিয়েটের উপর আক্রমন করে ঝাপিয়ে পরে। এতে জুলিয়েট’র শরীরে প্রায় ১১ ইঞ্চি লম্বা এবং দেড় ইঞ্চি গভীর ক্ষতসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত প্রাপ্ত হয়।
তৎক্ষনিক বিষয়টি বন বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতিতে পুকুর থেকে কুমির জুলিয়েটকে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে একটি শুকনো প্যানে রেখে চিকিৎসা শুরু করে প্রানী বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২৬ দিন নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসার পর স্ত্রী কুমির জুলিয়েটকে সুস্থ্য করে তোলা হয়েছে। ১৯ ফ্রেব্রয়ারী (শুক্রবার) বন বিভাগের কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে জুলিয়েটকে পুনরায় ওই পুকুরে অবমুক্ত করি। কিন্ত আমরা চিন্তিত ছিলাম, ভয় হচ্ছিল পুর্বের ঘটনা পুনরাবিত্তি ঘটিয়ে পিলপিল জুলিয়েটকে মেরে ফেলতে পারে। কারন পূর্বেই জুলিয়েট’র সংঙ্গে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডার এর বেশি সম্পর্ক ছিল।
জুলিয়েট দীর্ঘ ২৬ দিন পুকুরে না থাকায় পিলপিলের সংঙ্গে আলেকজান্ডার’র সম্পর্কটা গভীর হয়েছে। তাই পিলপিল আলেকজান্ডারের সাথে জুলিয়েটের সম্পর্ক মেনে নাও নিতে পারে। ঠিক তাই ঘটলো। জুলিয়েটকে ছাড়ার সংঙ্গে সংঙ্গে পিলপিল জুলিয়েটের উপর ঝাপিয়ে পরে আক্রমণ করে।
কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে ঘটলো নতুন ঘটনা। দুই জনের মারামারীর মধ্যে আলেকজান্ডার মাঝখানে ভেসে উঠলো এবং মাথা নাড়ার সাথে সাথে জুলিয়েট এবং পিলপিল আলাদা হয়ে দুইদিকে চলে গেল।
আলেকজান্ডার প্রথমে জুলিয়েটের কাছে কিছু সময় কাটিয়ে, পরে পিলপিলের কাছে গিয়ে সময় দিয়েছে বলে জানায় কর্মকর্তা আজাদ কবির। তবে মনে হচ্ছে দুজনকে আদর সোহাগে তাদের সংসার ভালই চলছে। বর্তমানে দুজন এক জায়গায় না থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো গোলমাল নেই, অবমুক্ত করার পর এখন পর্যন্ত তারা সবাই ভালো আছে বলে জানায় প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য,২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে ৮ একর জমির ওপর সরকারীভাবে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি।
নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।