স্ত্রীর পরকীয়া জানাজানিতে প্রবাসী স্বামীর আত্মহত্যা

প্রকাশঃ ২০২০-০২-২৯ - ১৯:২১

ডুমুরিয়া (খুলনা) : স্ত্রীর পরকীয়ায় সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহমান গাজীর (৪৬) আত্মহত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ১২টায় সৌদি আরবের কনফুদা এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার খবরটি সাথে সাথে ইন্টারনেট- মোবাইলে ছড়িয়ে পড়লে ডুমুরিয়ার আন্দুলিয়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পারিবারিক ও এলাকাবাসিসূত্রে জানা যায়; পরকীয়ার বলি আব্দুর রহমান গাজীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামে। পেশায় ছিল একজন রাজমিস্ত্রি। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করতেন। ১০ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন তিনি। ২ পুত্র সন্তান জন্মের পর আব্দুর রহমান গাজী ১ম স্ত্রীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে প্রেমের সুত্র ধরে আব্দুর রহমান খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা গ্রামের হেকমত আলী বিশ্বাসের একাধিক স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে মুর্শীদা সুলতানা (৩০) কে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে মিম নামে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। মিমের বর্তমান বয়স ৫ বছর। আব্দুর রহমান গাজী বসবাসের ভিটেটুকু ছাড়া সকল জমিজমা সম্পদ বিক্রি করে সর্বশান্ত হন। ধারদেনা করে বড় ছেলে সাগরকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন। ছোট ছেলে আকাশ তার মায়ের সাথে মামার বাড়ি অবস্থান করে পড়ালেখা করে। শেষ সম্বল বাড়িটাও অবশেষে স্ত্রীর চাপে ৭ শতক জমিসহ মুর্শীদার নামে লিখে দেয়।
মুর্শীদা আন্দুলিয়া গ্রামের আঃ রহমান বিশ্বাস ওরফে কুদা’র ছেলে ব্যবসায়ী শাহ বিএম কিবরিয়ার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। অনেকটা স্বামী স্ত্রীর মতই ছিল কিবরিয়া ও মুর্শীদার মেলামেশা। কিবরিয়ার অবাধে যাতায়াত চলে মুর্র্শীদার ঘরে। পাশের বাড়ির ইজিবাইক চালক মোঃ রাশেদ আকুঞ্জী জানায়; কিবরিয়া বিভিন্ন সময়ে খাবারসহ জিনিসপত্র নিয়ে প্রায়ই মুর্শীদার ঘরে প্রবেশ করতো। যা সবার নজরে ছিল।
আব্দুর রহমানের সৎ মা রহিমা বেগম জানায়; আত্মহত্যার আগের দিন রাত সাড়ে ১১টায় আমাকে ফোন দিয়ে রহমান মুর্শীদার ঘরে যেতে বলে। রহমান আমাকে বলেছিল ঘরে লোক ঢুকেছে, আমাকে সে ভিডিও কলের মাধ্যমে লোকটাকে দেখিয়েছে। তখন আমি বউমাকে ডাকলে দরজা না খোলায় আমি ফিরে আসি।
বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে সহকর্মীরা আব্দুর রহমানের অবস্থান না থাকায় তাকে খুঁজতে থাকে । একপর্যায়ে মরুভূমির মাঝে একটি ঘরে ঝুলান্ত অবস্থায় আব্দুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন প্রবাসি চাচাতো ভাই এমদাদুল হক ও ওলিয়ার রহমান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আব্দুর রহমানের আত্মহত্যার নেপথ্য কাহিনী উদঘাটন ও ৩ সন্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আন্দুলিয়া গ্রামের ঐ বাড়িতে শোকাহত পরিবেশে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এক আলোচনায় বসেন। বৈঠকে মুর্শীদা সুলতানা তার পরকীয়া প্রেমের উপাখ্যান অকপটে স্বীকার করেন এবং আব্দুর রহমানের ৩ সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের নামের বসবাসের ভিটে তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার ঘোষণা দেয় এবং মুর্শীদা শেষমেশ তার পরকীয়া প্রেমিক কিবরিয়ার ঘরে উঠিয়ে দেয়ার জন্য সুধিজনদের কাছে দাবি জানান।
বৈঠকে উপস্থিত সুধিজনদের নিকট মুর্শীদা সুলতানা জানায়; আব্দুর রহমান বিভিন্ন সময়ে কিবরিয়ার স্ত্রীর মোবাইলে ম্যাসেজ দিত। তখন আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম আমিও কিবরিয়ার সাথে পরকীয়া প্রেম করবো। কিন্তু মুর্শীদা বৈঠকে তার কোন প্রমান দেখাতে পারেননি। যা এলাকাবাসি অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
এদিকে আব্দুর রহমানের লাশ ফেরত আনার ব্যাপারে তার বড় ছেলে ও চাচাতো ভাইয়েরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।
এদিকে ৯৯৯ নং এ মুর্শীদার উপর টর্চার এবং মারধর করছে তার পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এমদাদুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায়। কিন্তু পুলিশ মুর্শীদা এবং তার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অভিযোগের কোন সত্যতা পাননি বলে জানালেন ঐ পুলিশ কর্মকর্তা। তখন পুলিশকর্তা তাদেরকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ধৈর্য্য ধারণ করার পরামর্শ দেন।