স্বাগতম মানবতার জননী শেখ হাসিনা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-০৩ - ১৪:২২

* নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ

* প্যানা ফেস্টুন তোরণে ছেয়ে গেছে নগরী

* ভাষন দেবেন সার্কিট হাউজে নৌকামঞ্চে

* ৯৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন

 

খুলনা : আজ শনিবার খুলনায় আসছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, মাদার অব হিউম্যানিটি, বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ নগরবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নগরীতে শত শত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরীর প্রতিটি সড়ক ও মোড়। এছাড়া গোটা নগরজুড়ে নিছিদ্র নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসাবে নগরীর খালিশপুরস্থ আইইবি কেন্দ্রে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ এর ৫৮তম কনভেনশন উদ্বোধন করবেন। বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জনসভার পূর্বে মঞ্চের পাশে তৈরি করা একটি বোর্ডে সুইচ টিপে ২ হাজার ৪১ কোটি টাকার ৯৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ৬৭৫. ৩৭ কোটি টাকার ৪৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকার ৫২টি নতুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন উদ্বোধনের জন্যে প্রকল্পসমূহের তালিকা গত মঙ্গলবার চূড়ান্ত করেছে। উদ্বোধনযোগ্য ৪৭টি প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় সার্কিট ময়দানে নৌকার আদলে তৈরি সুবিশাল মঞ্চ থেকে জনসভায় ভাষণ দেবেন। খুলনার ইতিহাসে এত বিশাল এবং ব্যয়বহুল মঞ্চ আগে কখনও হয়নি। ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রশস্ত এই মঞ্চ তৈরির কাজ গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হয়েছে। সুবিশাল ও মঞ্চ তৈরি করতে প্রায় ৯দিন লেগেছে বলে জানান, মঞ্চের ঠিকাদার আকতার হোসেন।
খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে মঞ্চ নির্মাণের কাজ করেছেন ৩০ জন মিস্ত্রী। তাদের সঙ্গে শ্রমিক হিসাবে ছিলেন আরো ৩০ জন। মঞ্চ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন ৪ জন। রং মিস্ত্রীর কাজ করেন ৭ জন। মঞ্চের মূল মিস্ত্রী যশোরের পাইকপাড়ার শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগের দুইটি বিশাল জনসভার মঞ্চ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের জনসভার মঞ্চও ছিল। তিনি জানান, নূর ডেকোরেটরের সাথে তিনি দীর্ঘদিন জড়িত আছেন। এবারের মঞ্চের ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি এবং মজবুত। অত্যাধুনিকভাবে এই মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি এই মঞ্চের সকল খরচ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই মঞ্চে ৪০০ নেতা বসতে পারবেন।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি জানান, এই মঞ্চে ২৬০ জন নেতা বসবেন। প্রথম সারিতে ৩০ জন, দ্বিতীয় সারিতে ৩০ জন এবং শেষ সারিতে ১০০ চেয়ার বসানো হবে। কারা মঞ্চে থাকবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেবিনেট মন্ত্রী, সাংসদ সদস্য, উপজেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ থানার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এই মঞ্চে থাকতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আজকের জনসভায় ১০ লাখেরও বেশি লোকের সমাবেশ ঘটবে। বৃহত্তর খুলনাসহ বিভাগের ১০ জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা থেকেও জনসভায় লোক আসবে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে সার্কিট হাউজ ময়দানের জনসভা স্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন, অসিত বরণ বিশ্বাস, শেখ মো. আবু হানিফ প্রমুখ।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হয়েছে সার্কিট হাউজ ময়দান এলাকা। তিনটি স্থানে ২৪টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো মাঠকে। ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার হুমায়ূন কবির জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে সমগ্র খুলনা মহানগরীকে। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আগত অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য সাড়ে তিন হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এছাড়া গত এক সপ্তাহ আগে থেকে সার্কিট হাউজ ময়দানের আশেপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ এবং মঞ্চের আশেপাশে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা রয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাব পেট্রোল ডিউটিতে নেমেছে। খালিশপুর ঈদগাঁহ ময়দান থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত ৯৩টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। শুধু জনসভা স্থলেই ৩৫টি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। জনসভা স্থলে ২০০ নারী পুলিশ নিরাপত্তায় থাকবে। মাঠে মেটাল ডিরেক্টর এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়া হোটেল, ছাত্রাবাসগুলোতেও নজরদারি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাতায়াতের পথে সব দোকানপাট এক দিনের জন্য বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।