স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-১৬ - ১৫:০৪

ইউনিক ডেস্ক :

কারও হাতে কোদাল। কারও হাতে বাঁশের ঝুড়ি। একজন মাটি কেটে দিচ্ছেন, অন্যজন সেই মাটি ঝুড়িতে তুলছেন। কেউ কেউ মাটিবোঝাই ঝুড়িগুলো নিয়ে রাস্তার ভাঙা অংশে ফেলছেন। অন্যরা মাটি সমান করার কাজ করছেন। এভাবে শতাধিক গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে ঠিক হয়ে গেল রাস্তা, যা বন্যার কবলে পড়ে ভেঙে গিয়েছিল।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান ইউনিয়নের কুঞ্জবন গ্রামে গতকাল শুক্রবার এভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামত করা হয়। এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলমও। প্রথম আলোকে তিনি বললেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের পর কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

কাজে নিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা কাঁচা রাস্তাটি সিন্দুরখান থেকে কুঞ্জবন ও রাজঘাট চা–বাগানে গেছে। এই এলাকার মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। উপজেলার রাজঘাট চা–বাগান, সিন্ধুরখান চা–বাগান উদনা ছড়া, কুঞ্জবনসহ আশপাশের হাজারো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু গত বছর আকস্মিক বন্যায় রাস্তাটি ভেঙে গিয়েছিল। এরপর এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে কয়েকবার ধরনা দেন। সবাই আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় কয়েক দিন আগে গ্রামবাসী এক বৈঠকে মিলিত হন। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা আর জনপ্রতিনিধিদের দিকে চেয়ে থাকবেন না। নিজেরাই রাস্তাটি সংস্কার করে নেবেন। ঠিক করা হয়, শুক্রবার সবাই সকালে একযোগে রাস্তা সংস্কারের কাজে নামবেন। সে অনুযায়ী গতকাল যথাসময়ে সবাই চলে আসেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ভেঙে যাওয়া ৬০ ফুট রাস্তা চলাচলের উপযোগী করেন।

কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল কবীর বলেন, গ্রামের যে বাড়িগুলো থেকে কাজ করার মানুষ আসেনি, সেসব বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে পাঠানো হয় কাজে নিযুক্ত সবার জন্য। সবাই একধরনের আনন্দ নিয়ে রাস্তা সংস্কারে নামেন। এখন সরকারের তরফ থেকে সংস্কার হওয়া রাস্তাটি পাকা করা জরুরি। তা না হলে আগামী বর্ষায় আবার বন্যার কবলে পড়ে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সিন্দুরখান ইউপির স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য আবদুস শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামবাসী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করেছে, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এখন আমরাও এই রাস্তা পাকাকরণের চেষ্টা করব। এ জন্য ইউপি কর্তৃপক্ষ এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে শিগগিরই একটি প্রস্তাব পাঠাবে।’