হচ্ছে না রাস মেলা,স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা যাবে পুণ্যস্নান

প্রকাশঃ ২০২০-১১-১০ - ১৮:২৭

বাগেরহাট প্রতিনিধি : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা অর্চনা ঘিরে সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রায় প্রতি বছরই রাস মেলা হয়। এ মেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি সারাদেশ থেকেই নানা ধর্মের হাজারো মানুষ ভিড় করেন। এছাড়া ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকেও অনেকে রাস মেলায় অংশ নেন। গেল বছর ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে কোনো মেলা হয়নি। আর এবার হচ্ছে না করোনার কারণে। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশ নিতে পারবেন।
২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা ও ৩০ নভেম্বর সকালে দূবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হবে।
সোমবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে রাস উৎসব ও পূজা উদযাপন আয়োজনের জন্য সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, সুন্দরবন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন, সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, দুবলা ফিশার ম্যান গ্রুপ ও রাস মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন, সহ-সভাপতি বাবুল সরদার, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু শন্তু, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে রাস পূজা উপলক্ষে রাস মেলার আয়োজনের সুবিধা-অসুবিধা ও সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে শর্ত সাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা ও পুণ্যস্নানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
শর্তগুলো হচ্ছে- ২৮ নভেম্বর রাস পূজা ও পুণ্যস্নানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হবে। ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাস পূজা এবং ৩০ নভেম্বর সকালে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের পূজা শেষ হবে। সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রাস পূজায় যেসব জলযান যাবে, সেগুলোতে এবং পূজা স্থলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ) রাখতে হবে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের অন্তত সাতদিন আগে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের অফিসে ভক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও লঞ্চের কর্মচারীদের তালিকাসহ আবেদন করতে হবে। যারা সুন্দরবনে রাস পূজার জন্য প্রবেশের অনুমতি পাবেন, তাদের সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবার জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা করবেন। কোনো ট্রলার বা লঞ্চে ৫০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না।
প্রত্যেক ভক্তের ক্ষেত্রে তিনদিনের জন্য ৫০ টাকা, নিবন্ধনযুক্ত ট্রলারকে দুশ’ টাকা এবং নিবন্ধনবিহীন ট্রলার প্রতি আটশ’ টাকা সরকারি রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাস মেলায় প্রবেশের জন্য পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছে বুড়িগোয়ালিনি, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী অতঃপর দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া, শিবসা নদী মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর। তবে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে রুটের সংখ্যা কমানো হতে পারে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এবারের রাস পূজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বনরক্ষীদের পাশাপাশি র‌্যাব-৬ খুলনা, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবেন।
রাস উৎসবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
এবারের রাস পূজা উপলক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধেও ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পূজায় আগত ভক্ত ও সংশ্লিষ্ট সবার খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেটসহ বিভিন্ন দ্রব্য সাগর, নদী বা চরে ফেলা যাবে না, ট্রলারে রাখা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।