হেফাজতের আমির আল্লামা শফি আর নেই

প্রকাশঃ ২০২০-০৯-১৮ - ২১:৩২

রিটন দে লিটন, চট্টগ্রাম:হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। আজ শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন।

এর আগে বিকেলে আল্লামা শফিকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়। আজ দুপুরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে এয়ার এম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

জানা যায়, হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফি। রাতে তাকে নগরীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ডে বসেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় এ আলেমের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরে আজ বিকেলে তাকে ঢাকার আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত, দেশের শীর্ষ কওমী আলেম আল্লামা আহমদ শফির শরীরের বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। ১০৫ বছর বয়সী এ প্রবীণ আলেম ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ফলে প্রায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। গত কয়েক মাসে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিলে একাধিক বার চট্টগ্রাম ও ঢাকার হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নিতে হয় বড় হুজুরখ্যাত আল্লামা শফিকে।

এক নজরে আল্লামা শফীর জীবনী
বাংলাদেশের ইসলামি শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন শাহ আহমদ শফী। যিনি আল্লামা শাহ আহমদ শফী বা আল্লামা শফী নামেও পরিচিত।হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে ছিলেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার (হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে পরিচিত) মহাপরিচালক ছিলেন।

আল্লামা শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসা এবং হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার পর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসাতেও চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ডে বসেন। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকাতেই সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আল্লামা শফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য সিনিয়র ইসলামী ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি যৌথ বিবৃতি দেন। যেখানে, ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

২০১০ সালে তিনি হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলায় ১৩টি ও উর্দুতে নয়টি বইয়ের রচয়িতা তিনি। আলেমদের বড় একটি পক্ষের কাছে খুব শ্রদ্ধার পাত্র। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বিভিন্ন সময় হয়েছেন সমালোচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে তিনি বেশি আলোচনায় আসেন।
২০১৭ সালে তার সঙ্গে বৈঠকের পর কওমির সনদের স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আহমদ শফী, যাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত। তিনি কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি ছিলেন।