৩৯ টাকা করে চাল সংগ্রহ করার ঘোষণায় চালের বাজার অস্থিতিশীল : বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশঃ ২০১৭-১২-০৯ - ১১:০০

কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : সরকার ৩৯ টাকা করে চাল সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়ার পর সব ধরনের চালের দাম পাইকারিতে কেজিতে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারিতে প্রকার ভেদে ২-৩ টাকা ও খুচরায় বেড়েছে ৪-৫ টাকা। স্বর্ণা বেশ কিছুদিন ধরে পাইকারি মুল্য ছিল ৩৬ থেকে সাড়ে ৩৬ টাকা। এখন তা সাড়ে ৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । গত ৩-৪ দিন ধরে চালের বাজার অস্থিতিশীল বিরাজ করছে। সরকার চাল কেনার ঘোষনা এই সময়ে না দিলে সামনেও আরও দাম কমানোর সম্ভবনা ছিল কিন্তু এখন উল্টো মিনিকেট থেকে শুরু সব ধরনের চাল বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন অভিযোগ খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারতীয় আমদানীকৃত চালও। শুক্রবার নগরীর নিউ মার্কেট, শেখ পাড়া বাজার ও বড় বাজারে খুচরা ও পাইকারি চাল বিক্রেতাদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন বাজার থেকে স্থানীয় মুদিদোকানে এর কেজিতে তাদের চেয়ে কেজিতে আরও ৩-৪ টাকায় বেশি দরে বিক্রি করছেন।
ডুমুরিয়া ওসি এলএসডি আব্দুস সোবহান বলেন, সরকার এবার ৩৯ টাকা চাল সংগ্রহ ঘোষনা দিয়েছেন। গত ৩ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈধ লাইসেন্সধারী মিলারদের কাছ থেকে এই দামে চাল সংগ্রহ করবনে। গত মৌসুমে যারা লস করে যেসব মিলাররা সরকারকে চাল দিয়েছেন শুধুই তারাই এই সুবিধা পাবেন। চাল কেনার ঘোষণা পরই বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে বলেন, দিনকে দিন চালের বাজার যে পরিস্থিতি এগুচ্ছে তাতে অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। দেশীয় চালের পাশাপাশি ভারতীয় চালের দামও বেড়ে গেছে। তবে এই ঘোষণা মাঠ পর্যায় কৃষক লাভবান হচ্ছে এটাই বড় বিষয়।
নগরীর নিউ মার্কেটের চাল বিক্রেতা মেসার্স মোমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ মোমিন শুক্রবার এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ৩০ নভেম্বর সরকার মিলারদের কাছ থেকে ৩৯ টাকা চাল কেনার ঘোষণা দেন। এর পর শুক্রবার ও মিলাদুন্নবী কারণে বাজার বন্ধ ছিল। খোলার পরই চালের আড়তে গিয়ে দেখা যায় সব প্রকার চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মোটা চালের দামও বেড়েছে বেশি, সেই সাথে আমদানীকৃত চালের দামও বেড়েছে। গত বছর সরকার সিদ্ধ ৩৪ টাকা ও আতপ ৩৩ টাকা দরে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করেছিলেন। এবার কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে চাল কেনার ঘোষনা দেন। এই ঘোষণা না দিলে চালের দাম আরও কমে যেতো। এখন উল্টো দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। তার দেয়া তথ্য মতে, গত ১-২ ডিসেম্বর থেকে চালের বাজার অস্থিতিশীল বিরাজ করছে। এই সময়ের মধ্যে পূর্বে প্রকার ভেদে মিনিকেট ৫৪-৫৫ চাল বিক্রি হয়। এখন তা প্রকার ভেদে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৫৯ টাকা। ভারতীয় মিনিকেট ৫১ টাকার পরিবর্তে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা সাড়ে ৩৬ টাকার পরিবর্তে সাড়ে ৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা তারা বিক্রি করছেন কেজিতে ২-৩ টাকা বেশিতে। ২৮ বালাম নামক চাল পাইকারি বিক্রি ছিল (নন বাছাই) ৫০ টাকা এখন ৫২ টাকায়। বাসমতি ৬৪ টাকার পরিবর্তে ৬৬ টাকা পাইকারি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তার মতে মোটা চালের ওপর বেশি প্রভাব পড়েছে। কেহিতে ৩-৪ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একই বাজারে চাল বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, সরকার গত বৃহস্পতিবার চাল কেনার ঘোষণার পরের দিন চালের বাজার অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বস্তা প্রতি ১শ’ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি নভেম্বর শেষের দিকে পাইকারি চালের আড়তে গেলে মাহাজনরা বাকিতে চাল দেয়ার জন্য প্রস্তুতি ছিল, এখন নগদ টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যাচ্ছে না।
নগরীর বড় বাজারে চাল বিক্রেতা নাম প্রকাশের অনুচ্ছিক বলেন, একই সুর উল্লেখ করে দেশী চালের পাশাপাশি ভারতীয় আমদানীকৃত চালের দামও বেড়েছে। পাইকারি কেজিতে ৪-৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সব দোকানীরা আগের দাম চাল কেনা রয়েছে তারা একটু কম টাকায় ছাড়তে পারলেও আমরা পারছি না। গত সপ্তাহ পরশ নামক যে চাল কেজিতে ৪২ টাকা ছিল সেই চাল এখন ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পায়। এরপর বন্যা ও ব্লাস্ট রোগে ফসলহানিকে ইস্যু করে আরও কয়েকদফা বৃদ্ধি করে মিলমালিকরা। এরকম পরিস্থিতি ছিলো কয়েক মাস ধরে। পরবর্তীতে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে কিছুটা চালের উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণ আসে। এখন আমন তোলার মৌসুম। মিল মালিকরাও এ ধান কিনে চাল তৈরি করে বাজারজাত শুরু করেছে। ধান-চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও সরকারি চাল কেনার ঘোষনার কারণে চালের দাম দিনকে দিন বাড়তি দিকে যাচ্ছে।
শেখ পাড়া বাজারে চাল বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, এই সিজনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেন দাম বাড়াল সেটা বুঝতে পারছি না। আর আমরা বুঝতেও চায়নি। যেই দামে কিনে আনি তার চেয়ে ১-২ টাকা লাভে আমরা বিক্রি করছি। ক্রেতারা আমাদের সাথে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা প্রশ্ন করলেও একই উত্তর দেই।
ওই বাজারে কথা হয় ক্রেতা মোঃ শামীমের সাথে গত সপ্তাহ ৪১-৪২ টাকায় স্বার্ণ চাল কিনে আনি। এখন দাম নিচ্ছে ৪৪-৪৫ টাকায়। দিনমুজুরি শামীম বলেন, বর্তমানে কোনো কাজ-কাম নেই। কোনোদিন কাজ হলে টাকা পাই না হলে বসে থাকতে হয়। এই অবস্থায় চালের দাম বেশি হওয়ায় তার সংসার নিয়ে নাভিম্বাস উঠেছে।