অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগরে ইকবাল জাহিদ (৪০) নামে এক এনজিও কর্মকর্তাকে অপহরণের ১১ঘন্টা পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের পর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত এক নারীসহ ৬অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভয়নগর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। অপহৃত ইকবাল জাহিদ উপজেলার একতারপুর গ্রামের পীর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে। সে যশোরের আল আরাফা সঞ্চয় ও ঋণদাণ সমবায় সমিতি অভয়নগর উপজেলা শাখার মাঠ কর্মকর্তা। আটকৃতরা হলেন, যশোরের কাঠালতলা রায়পাড়ার এমএম শামসুর রহমানের ছেলে এমএম রুবেল হাসান বাবু (৩৩), অভয়নগরের গুয়াখোলা প্রফেসরপাড়ার মৃত মানিক মোল্যার ছেলে আকাশ মোল্যা (২৪), বুইকরা গ্রামের মালেকের চাতাল সংলগ্ন মুজিবর হাওলাদারের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৫), পাঁচকবর এলাকার মৃত গণি সরদারের ছেলে আবদুল মালেক (৩২), শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের মাজেদ খানের ছেলে ইমরুল খান (২৮) ও একই গ্রামের জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগম (২৫)। এজাহারসূত্রে জানা যায়, ইকবাল জাহিদ রোববার সকালে উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় ঋণ প্রদান কাজে জাহিদ খানের মেয়ে কনা বেগমের বাড়িতে যান। ঋণ প্রদানে জটিলতা দেখা দিলে কনা বেগমের ভাই ইমরুল খান স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে ইকবাল জাহিদকে আটকে রাখে। পরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবীকৃত চাঁদার টাকা আসামী এমএম রুবেল হাসান বাবুর নিকট দিতে বলে। টাকা পরিশোধ না করলে ইকবালকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এসময় ইকবাল তার প্রতিষ্ঠানের জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এরশাদুলকে বিষয়টি অবহিত করলে বিকালে রুবেলের কাছে এরশাদুল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পৌঁছে দেয়। কিন্তু অপহরণকারীরা আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় ওইদিন সন্ধ্যায় ইকবালকে একটি সাদা রঙের হাইএস মাইক্রোযোগে ইছামতী গ্রাম থেকে নওয়াপাড়া বাজারের সোহাগ কাউন্টারে অপহরণ করে নিয়ে আসে। ওই কাউন্টারের ভিতরে নিয়ে টাকা পরিশোধে চাপ দিতে থাকে এবং মারপিট শুরু করে। পরে রাত ৯টার সময় তাকে উপজেলার পাঁচকবর এলাকায় মৃত গণি সরদারের ছেলে আবদুল মালেকের বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে বাকি ৫০হাজার টাকার জন্য ইকবালের স্ত্রী সালমাকে ফোন করে অপহরণকারীরা। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় শুরু হয় ইকবাল জাহিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে ইকবাল জাহিদ রক্তাক্ত জখম হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। এসময় অপহরণকারীরা আহত ইকবালকে ওই মাইক্রোবাসে করে যশোরের কাঠালতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আদায়কৃত ১লাখ ৩০হাজার টাকা ১০জন অপহরণকারী নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে ইকবালকে নিয়ে অভয়নগরের সরখোলা গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে শাকিলের নেতৃত্বে বিলের মধ্যে একটি গাছের সাথে ইকবালকে বেঁধে রাখে এবং অপহরণকারীরা বাকি টাকার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সালমাকে আসতে বলে। এদিকে ইকবালের স্ত্রী সালমাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিষয়টি অভয়নগর থানার ওসি মো. তাজুল ইসলামকে অবহিত করলে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। বাকি টাকা পৌঁছে দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইকবালের স্ত্রীর সাথে সাদা পোষাকে পুলিশ অবস্থান করে। রাত আনুমানিক ৩টার সময় অপহরণকারীদলের এক সদস্য রবিউল ইসলাম মুক্তিপনের টাকা নিতে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপহৃত ইকবাল জাহিদকে সরখোলা বিলের মধ্য থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় অপহরণকারীদলের মুলহোতা রুবেলকে আটক করলেও শাকিল ওই সময় দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কনা বেগমসহ আরও চারজনকে আটক করে। এঘটনায় সোমবার দুপুরে ৯জনের নাম উল্লেখ করে অপহৃত ইকবাল জাহিদ বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৪। এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রায় ১১ঘন্টার অভিযান শেষে এক নারীসহ ৬ জন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপনের ১৫ হাজার টাকা, একটি চাকু ও অপহৃত এনজিও কর্মকর্তা ইকবালের মোটরসাইকেল। থানায় মামলা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।