সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বেশ কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। তার মৃত্যুর সাথে সাথেই মানুষের সামনে অনেকগুলি প্রশ্ন উঠে এসেছে যার মধ্যে অন্যতম হলো সিনেমা জগতে নেপোটিজম বা স্বজন পোষণ। করণ জোহর, আলিয়া ভাটের মতন মানুষদের ওপর উঠেছে অভিযোগ। বলিউডে নেপোটিজম নিয়ে মুখ খুলেছেন কঙ্গনা রানাওয়াত, আয়ুষ্মান খুরানা, অভয় দেওলের মতন তারকারা। এবার বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম নিয়ে মুখ খুলেছেন শ্রীলেখা মিত্র। সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে।
শ্রীলেখা মিত্রের পর এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তথাগত মুখোপাধ্যায়। তার অভিযোগ বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতাদেরও নাকি শোয়ার শর্ত দেওয়া হয়! অভিনেতার এই চাঞ্চল্যকর বক্তব্যের পরই নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে।
কিছুদিন আগে নিজের ইউটিউব লাইভে একটি ভিডিও করে শ্রীলেখা মিত্র বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম এর অভিযোগে সরাসরি বিদ্ধ করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। তবে মূলত তার বক্তব্য ছিল প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণা জুটির প্রেমের জন্যই কোনোদিন ইন্ডাস্ট্রিতে লিড রোল পাননি তিনি। তাছাড়াও তার লাইভে উঠে আসে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এর কথাও, যদিও পাল্টা পোস্ট করে নাম উল্লেখ না করেই তাকে উত্তর দিয়েছেন স্বস্তিকা যে পোস্টটি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় শেয়ার করেছিলেন কারন শ্রীলেখার কথার মধ্যে স্বস্তিকা ও সৃজিতের সম্পর্কের কথা বলেন শ্রীলেখা মিত্র। টোটা রায়চৌধুরীও মুখ খোলেন সৃজিত মুখোপাধ্যয়ের পক্ষে।
অন্যদিকে শ্রীলেখার পক্ষ নিয়ে মুখ খুলেছেন অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়। শ্রীলেখার উদ্দেশ্যেই তিনি লেখেন যে “তুমি তোমার সত্যিগুলো তোমার মতন করে বলেছ, বরাবরই বলে আসছ, শুধু এভাবে হয়তো প্রথমবার, হয়তো আরো অনেক সত্যি আছে যেগুলো কোনো একটা বিকেলবেলায় বলতে ইচ্ছে করবে, আবার নাও ইচ্ছে করতে পারে। সত্যির একটা চূড়ান্ত নগ্নতা রয়েছে তাই লজ্জাবোধও প্রবল। শ্রীলেখা তুমি লজ্জা পেও না তাহলে কিন্তু আরও অনেক শ্রীলেখা চুপ করে যাবে।”
তবে এইটুকু বলেই থেমে যাননি তিনি। নিজের পোস্টে সরাসরি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিচালকের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন তিনি। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন কলকাতার এক পরিচালকের বিরুদ্ধে যিনি তার পুরুষ অভিনেতাদের কাস্টিং কাউচ করতেন। তিনি বলেছেন “ক’জনই বা জানতে চান নামী সচেতন, উদারমনস্ক লেখক তথা পরিচালক তার পুরুষ অভিনেতাদের সিনেমায় সুযোগ দিতে তার সাথে শোওয়ার প্রাথমিক শর্ত ডিঙোতে বাধ্য করতেন।”
টেলিভিশনে কাজ চাইতে গিয়ে এরকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন তথাগত। তিনি জানিয়েছেন, একজন পরিচালক বাড়িতে ডেকে দরজা-জানলা বন্ধ করে, লাইট জ্বালিয়ে অভিনয় শেখাবে বলে কাছে আনতে চেয়েছিল। পরিস্থিতি অন্যদিকে গড়াচ্ছে দেখে সেখান থেকে সরে আসি। যদিও ছোট থেকেই শুনে এসেছি পরিচালক-প্রযোজককে সন্তুষ্ট না করলে ব্ল্যাকলিস্টে থাকতে হয়। এখনও তা চলে আসছে। নতুনদের মধ্যে একাংশই তার শিকার।
তিনি আরও বলেন, “এখন নিশ্চয় প্রশ্ন উঠবে, যারা ছবিতে চরিত্র পায় তারা কি সবাই ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে পরিচালকের সঙ্গে শুয়ে পাচ্ছে? তা একেবারেই নয়। এই যে শ্রীলেখাদি বলল, তার পর ওকেও শুনতে হচ্ছে, ও কী কী করেছে। আমার বক্তব্য, শ্রীলেখাদি নামটা ইস্যু নয়। এখানে একের পর এক ঘটনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, যা বলে দেয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতি মুহূর্তে অমর্যাদা হয়। এখনও কিছু পরিচালক আছে পুরুষ অভিনেতাদের যাদের ‘এন্টারটেইন’ করতে হয়। কখনও সেক্সুয়ালি, কখনও বাজার করে, চাকরগিরি করে।”
“দেবলীনাকে এক পরিচালক বলেছিলেন, “আচ্ছা, আমি যে তোকে আমার ছবিতে নেব তার বদলে তুই কী দিবি?” দেবলীনা বলে, “কেন, আমি আমার ক্রাফট দেব!” ওই পরিচালক বলেন, “সে তো সবাই দেবে। আর কী দিবি?” এই প্রশ্নটা কিন্তু বার বার অভিনেত্রীদের কাছে আসে। আসছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নোংরামো করে সিনেমা তৈরি হয়… হবে। এটা স্বীকার করার সময় এসেছে এ বার। আর সেই কারণেই আমাদের সিনেমা এত পিছিয়ে!”