উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

প্রকাশঃ ২০১৯-০৩-২৪ - ১৬:১৮

ঢাকা অফিস : তৃতীয় ধাপে ১১৬টি উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে ভোট গণনার কাজ। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় তৃতীয় ধাপের উপজেলার নির্বাচন। আজ রবিবার, সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। শুরুর দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে কটিয়াদীতে অনিয়মের অভিযোগে ভোট স্থগিত করা হয়। আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার অভিযোগে স্থগিত করা হয় উপজেলার সব কেন্দ্রের ভোট। এ ঘটনার পর কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও কটিয়াদী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ভোট কেন্দ্র দখল নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনার পর চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ আধাঘণ্টা বন্ধ থাকে। এছাড়া, কক্সবাজারের পেকুয়ার দক্ষিণ মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় মুক্তিযোদ্ধা আফছারউদ্দীনসহ তিনজন আহত হয়েছেন।

এছাড়া, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের একটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগে ভোট স্থগিত রাখা হয়। ব্যালটে সিল দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়। এ সময়, অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেন আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী।

এবার চারটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হয় ইভিএম পদ্ধতিতে। চার উপজেলার মধ্যে রয়েছে রংপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মেহেরপুর সদর উপজেলা।

তৃতীয় ধাপে ১২৭ উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও নরসিংদী ও কক্সবাজার সদর উপজেলা চতুর্থ ধাপে যুক্ত এবং আদালতের নির্দেশে লোহাগাড়া এবং কুতুবদিয়ার নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এখন ভোটাভুটি হবে ১২৩ উপজেলায়।

তবে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, শিবচর, ভেদরগঞ্জ, পলাশ এবং আনোয়ারা উপজেলার সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হচ্ছে ১১৯টিতে। আর ১৩ জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৩২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান।

তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনের জন্য এক কোটি ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার এক’শ ৪৮ জন ভোটারের জন্য ৯ হাজার সাত’শ ৫৯টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়।

১১৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৩৪৯ প্রার্থী। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯২ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৪০২ জন প্রার্থী।

এদিকে, নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরণের প্রস্তুতি রেখেছে নির্বাচন কমিশন। তবে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা ইসির দায়িত্ব না, বলে সাফ জানিয়েছেন সিইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা ভোটারদের আশ্বস্ত করেছি যে ভোটকেন্দ্রে আপনাদের জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে। তারপরও যদি ভোটাররা ভোট দিতে না আসে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা প্রার্থীদের কাজ।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, আনসার, বিজিবির, কোস্টগার্ডের পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিষ্ট্রেট থাকছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৩শে মার্চ রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘন্টা নির্বাচনি এলাকায় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসি।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ১৪ জেলার ২৮ উপজেলায় বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শনিবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে কমিশন সচিবালয়ে এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

তিনি জানান, যেসব এলাকায় সংসদ সদস্যরা প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন তাদেরও এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনিয়মের অভিযোগে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এদিকে তৃতীয় ধাপের এই নির্বাচনে ৪টি সদর উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।

হেলালুদ্দিন আহমদ জানান, ‘যেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। ওই সমস্ত উপজেলা থেকে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একইসঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর সে সমস্ত উপজেলাতে আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য যারা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেও আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা হিসেবে এলাকা ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’