করোনা ছাড়াও সাবেক ওই চেয়ারম্যান কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শুরুতে তার ছেলেরা ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। পরে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে চাপে পড়ে ঢাকায় নিতে রাজি হয় তারা।
রোববার রাতেই স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়া হচ্ছিল তাকে। কিন্তু রংপুরে পৌঁছাতেই তার ছোট ছেলে আরিফ জোর করে তার বাবাকে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বার বার অনুরোধ করলেও সন্তানদের রাজি করাতে পারেননি বলে জানিয়েছে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তারা হাসপাতালে আমিনুর রহমানকে ভর্তি করেই পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সকালে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমিনুর রহমান। সন্তানদের অবহেলার কারণেই সাবেক ওই ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি শুরুতে তার সন্তানরা রংপুরেই তাকে দাফন দাবি জানায়।
আমিনুর রহমানের ছোট ছেলে আরিফ প্রধান বলেন, “বাবার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো যে ঢাকায় নেয়া যাচ্ছিল না। তাই রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি করি। এছাড়া প্রশাসন আমাদের ১৬ দিনের জন্য লকডাউনে রাখায় আমরা হাসপাতালে বাবাকে রেখে চলে আসি। পালিয়ে এসেছি এটা ঠিক নয়।”
অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ রনি বলেন, “আমরা ওই করোনা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু রংপুর যাওয়ার পরই তার ছেলেরা জোর করে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। তারা সেখানে ভর্তি করে যে যার মতো চলে যায়। আমাদের কিছু করার ছিলো না।”
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা করোনা আক্রান্ত ওই রোগির শারীরিক অবস্থা দেখে শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার মাত্রই তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু তার ছেলেরা জোর করে তাকে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি করে। এটা তারা ঠিক করেনি। কারণ ওই হাসপাতালে কেবল মাত্র করোনার চিকিৎসা করা হয়। কিডনির চিকিৎসা ও ডায়ালেসিসি করার সুযোগ নেই।”
রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএম নূরুন নবী বলেন, “চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তারা এখানে ভর্তি করে দিয়েই চলে যায়। পরে আমরা তাকে ঢাকায় পাঠাতে বার বার যোগাযোগ করলেও তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।”
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোলেমান আলী বলেন, “করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ওই ব্যক্তির মরদেহ রংপুর থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আনা হচ্ছে। ইমানসহ একটি স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রয়েছেন তার দাফন কার্য সম্পন্ন করার জন্য। খুব সতর্কতার সাথে তার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হবে।”
উল্লেখ্য, সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান প্রধান দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যাসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ঢাকায় তার ছেলের বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তার সাথে তার স্ত্রীও থাকতো। ঢাকায় তার স্ত্রী মারা গেলে গত ১৫ মে তাকে দাফন করার জন্য বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের প্রধানপাড়া তার নিজ এলাকায় নিয়ে আসেন। ওই দিনই আমিনুর রহমানসহ তার পরিবারের চার সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হলে ১৭ই মে আমিনুর রহমানের করোনা ধরা পড়ে।