গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাটে যাবাহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের নামে বেপরোয়া চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজদের হাত থেকে ভ্যান রিক্সা চালকরা পযর্ন্ত রেহাই পাচ্ছে না।
দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন পেরি ঘাট হচ্ছে কালনা ফেরি ঘাট। এই ঘাট দিয়ে যশোর, খুলনা, বেনাপোল, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে থাকে।
এ রুট দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী গাড়ী থেকে নড়াইল শ্রমিক ইউনিয়নের নামে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে। এ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে চলাচলকারী বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চালকেরা।
গাড়ী চালকদের অভিযোগ, নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নামে সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের কথা বলে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে সরকারি ঘাটে প্রতিটি গাড়ী থেকে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।
কালনা ফেরিঘাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফেরিঘাট এলাকায় কয়েকজন লোক বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। এ সময় চালকদের হাতে ‘নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন’ লেখা সম্বলিত ২০ টাকার একটি টোকেন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশেই বসে আছেন নামধারী কয়েকজন শ্রমিক নেতা।
চাঁদা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ী আটকে রেখে হয়রানী করা হয় বলে অভিযোগ চালকদের। এতে পরিবহন যাত্রীদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ট্রাক চালক মাহাবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘এ পথে যাতায়াত করতে প্রতিবার সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনকে ২০/৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনের কাছে চরম নাজেহাল হতে
হয়। এই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি। চাঁদা আদায়কারী মোঃ তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি দিন মজুর হিসেবে গাড়ী থেকে
নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা কালেকশন করে দেই। তবে আমি এ ব্যপারে আর কিছু বলতে পারি না।’
নড়াইল জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদেক খান কালনা ফেরিঘাটে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ঘাটে সিরিয়াল মতো যানকাহন ফেরিতে উঠতে হয়। ফেরিতে আগে উঠা নিয়ে প্রায়ই বাস-ট্রাক শ্রমিকদের মধ্যে দন্দ্ব হত। যার কারণে ঘাটে যানবাহনের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের জন্য দশ টাকা করে নেয়া হয়।’
এই ঘাটটি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এলাকার মধ্যে হলেও প্রধান্য বিস্তার করে চলছে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের লোকজন।
তারাই কালনা ঘাটের পশ্চিম পাড় নিয়ন্ত্রন করে চাঁদা আদায় করে থাকে। ঘাট মালিক মঞ্জুর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তিনি কালনা ঘাটের পশ্চিম পাড়ে
চাঁদা নেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, যারা ওপার থেকে এপারে আসন তারাও তার কাছে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু, ওপারে গিয়ে তাদের
কিছু করার নাই বলে তিনি অসায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ ব্যপারে আইন-শৃংখলা রক্ষা সংস্তাকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, গুরু নিয়ে আসা রোকজন এসময় ব্যপক চাঁদাবাজির শিকার হবেন। এটি বন্ধ হওয়া উচিৎ।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মুকসুদপুর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন ভূঞা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি ওসি সাহেবকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবো।
এ ব্যপারে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আজিজুর রহমান কালনা ঘাটের পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগাড়া অংশে (যদিও তা কাশিয়ানী উপজেরার অংশ) ব্যাপক চাঁদাবাজির হচ্ছে একথা স্বীকার করে বলেন, ওপারে আসলে আমাদের কিছুই করার নাই।
তিনি বলেন, ওইপাড় আমাদের মধ্যে হলেও আইন-শৃংখলা রক্ষার কাজ করে নড়াইল জেলা পুলিশ। কাশিয়ানী অংশের চাঁদাবাজি আমরা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি।