কৃষিজমির মাটি যায় ইটভাটায়

প্রকাশঃ ২০২৩-০৩-২৫ - ১০:৪৭

জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে ঘরবাড়ির চাহিদা। সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে কমছে কৃষিজমি। বড় শহরের আশপাশে ফসলের মাঠে বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্পের সাইনবোর্ডের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে রাস্তাঘাটের চাহিদা। একই সঙ্গে গড়ে উঠছে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে ইটভাটা। এসব ইটভাটায় মাটির জোগান দিতে গিয়ে বদলে যাচ্ছে কৃষিজমির ধরন। কমছে জমির উৎপাদনক্ষমতা। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুমিল্লার গোমতী নদীর চরজুড়ে কোদালের পাশাপাশি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ট্রাক্টরে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। এসব মাটির ৯০ শতাংশই যাচ্ছে ইটভাটায়। এই সময়ে আগে যে চর ছেয়ে থাকত আলু, মুলা, কপি ইত্যাদি সবজিতে, সেখানে এখন সবুজের কোনো ছোঁয়া নেই। এভাবে মাটি কাটার ফলে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশঙ্কা করছে, এ বছর যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে চরের অন্তত ৭০০ একর ফসলি জমি হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি ২০১৯-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গড়ে প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর। গত ১১ বছরে আবাদি জমি কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। তার পরও উপকূলীয় এলাকায় নোনা পানির অনুপ্রবেশের কারণে জমির উর্বরতা কমছে। কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। তামাক চাষের মতো কিছু ‘লাভজনক’ ফসল খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য জমির পরিমাণ কমাচ্ছে। জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯-এ অকৃষি খাতে কৃষিজমির ব্যবহারকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষিজমি সুরক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে এসব আইনের বাস্তবায়ন প্রায় নেই বললেই চলে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।

নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। ইট তেমনই একটি নির্মাণসামগ্রী। ইট উৎপাদনের আরো অনেক পন্থা রয়েছে। পরিবেশসম্মত ইট উৎপাদনের উদ্যোগ কম বলেই কৃষিজমিতে আঘাত আসছে বেশি করে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সারা দেশেই চলছে এভাবে কৃষিজমি হ্রাসের সর্বনাশা প্রক্রিয়া। কুমিল্লায় এই প্রবণতা বেশি জোরদার। এর আগে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, শুধু মুরাদনগর উপজেলায় পৌনে ২০০ ভেকু বা মাটি খননকারী মেশিন রয়েছে। ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। একইভাবে গোমতীসহ বিভিন্ন নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে নদীভাঙনের পরিমাণ এবং কমছে কৃষিজমি।

আমরা মনে করি কৃষিজমি রক্ষায় আরো কঠোর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার এই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করতে হবে।