ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রা : কয়রায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজনে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (২৭ জুন) সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এ গণ-শুনানি। এসময় কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাইদ মাহমুদ খান। শুনানিতে উপজেলার ৯টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে ৩৬টি অনিয়মের অভিযোগ করেন কয়রার সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে সবচাইতে বেশি ১১টি অভিযোগ উঠেআসে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের বিরুদ্ধে। এছাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে ৭টি, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে ১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে ৩টি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে ৪টি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে ৩টি, উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরের বিরুদ্ধে ৩টি, মৎস অফিসের বিরুদ্ধে ৩টি ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের বিরুদ্ধে ১টি অভিযোগ করা হয়। শুনানিতে সংস্লিষ্ট সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেন। এ সময় দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাইদ মাহমুদ খান সরকারী অফিস সমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে যারা ঘুষ দাবি, হয়রানি বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, তাদের হয়রানির বিবরণ শুনে সমাধানও করা হয়। প্রথমেই উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের বিরুদ্ধে আনিত ১১টি অবজেকশনের ৭টির শুনানি হয়। বাকি ৪টির অভিযোগকারীরা উপস্থিত না থাকায় শুনানি হয়নি। শুনানিতে সাবেক সহঃ সেটেলমেন্ট অফিসার নির্মল কুমার নন্দী ও মহরার ফজলুল হকের নামে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন অভিযোগকারীরা। এসময় দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত সাপেক্ষে সহঃ সেটেলমেন্ট অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন এবং মহরার ফজলুল হকের বিরুদ্ধে দালাল আইনে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন। শুনানিতে উপজেলা প্রকৌশলী শেখ সামছুল আলোমের বিরুদ্ধে স্থানীয় শহীদ নারায়ন ক্যাম্পের স্মৃতি সৌধ নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন কয়রা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। জবাবে উপজেলঅ প্রকৌশলী অনিয়ম হলে পুনরায় নতুন করে করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। এছাড়া তোহসিলদার মোস্তফা খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে খাজনা গ্রহনে অতিরিক্ত টাকা গ্রহন, নাম পত্তনের তদন্তে অবৈধ অর্থ আদায়, খাস জমি স্থানীয় ভূমি দস্যুদের পেতে সহযোগিতা করে খাজনা গ্রহন, একই এলাকায় দীর্ঘ ৫বছর যাবত চাকুরি, দালালদের লালন-পালনসহ নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জবাবে তোহসিলদার মোস্তফা খায়রুজ্জামান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করলে দুদক কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে তদন্ত করে দুদককে প্রতিবেদন দেবার নির্দেশ দেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়গে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। তবে অভিযোগকারীরা উপস্থিত না থাকায় শুনানি সম্ভব হয়নি। এছাড়া কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোলের প্রভাষক আক্তারুজ্জামান ও কম্পিউটার শিক্ষক মোঃ পিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। ভূগোলের প্রভাষক আক্তারুজ্জামান কলেজে উপস্থিত না হয়েও বেতন উত্তলন করেন বলে অভিযোগে ওঠে। অভিযোগে বলা হয় শিক্ষক আক্তারুজ্জামান খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সালাম মুর্শিদি এর পিএ এই কারনে তিনি ক্লাস না করেও মাসে একবার কলেজে এসে বেতন নিয়ে যান। এসময় দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে রুগিদের অপারেশনে অনিয়ম, সরকারি ঔষধ গরিবদের না দেয়া, ডাক্তারদের ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রোগি দেখাসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় দুদক কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে দুদকে রিপর্ট প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের বিরুদ্ধে অসাদাচারণের অভিযোগ করা হলে অফিসার তুহিন কান্তি ঘোষ উপস্থিত সকলের সামনে সদাচার করবেন বলে অঙ্গিকার করেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে মিটার রিপ্লেসমেন্টে অনিয়ম ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে অবৈধ অর্থ গ্রহনের অভিযোগ উঠলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম দুদক কর্মকর্তদের সামনে জড়িতদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহনের অঙ্গিকার করেন। শুনানি শেষে ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাইদ মাহমুদ খান বলেন,জনগণ যদি মনে করে আমি দুর্নীতি করবো না এবং অন্যকেও দুর্নীতি করতে দিবো না, তবেই যেকোন সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি করতে পারবে না। জনগণের স্বদিচ্ছায় দুর্নীতির মুলোৎপাটন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।