কামরুল হোসেন মনি : সরকারি কর্মচারী নয় কিন্তু তারা সরকারের কাজ করে। তারা বেতন পায় সরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান থেকে। সরকারি সংস্থা থেকে পাওয়া টাকা আর কর্মচারীকে দেওয়া টাকার পার্থক্যই হলো আউটসোর্সিং কোম্পানির মালিকের লাভ। এ কারণেই আউটসোর্সিং কোম্পানির নিরন্তর চেষ্টা কর্মচারীদেরকে ঠকানোর। এ সবের কারণে দরদ্রি কর্মচারীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাদের চাকরি চলে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খান এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদার আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সুইপার ও গার্ড মিলে ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগ রয়েছে। নির্ধারিত বেতনের চেয়ে অনেক কম টাকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
খান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ মুজিবুর রহমান লুলু বলেন, চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগকৃত কর্মচারীকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গার্ড বেতন হিসেবে মাসিক পাচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার আর সুইপার ৫ হাজার টাকা। এছাড়া দুই ঈদে বানস বাবদ ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তারা কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেননি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের কথা অনুযায়ী বেতন দিলে প্রতিষ্ঠানটি চালাবো কি করে। এদের আমরা বেতন পরিশোধ করি, আর আমরা সেই বেতন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে ৬ মাস লেগে যায়।
খুমেক হাসপাতালের অফিস সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রয়োজনের তাগিদে সিকিউরিটি গার্ড ও সুইপার পদে ৩০ জন লোকের প্রয়োজন। হাসপাতালের চুক্তি অনুযায়ী খান এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ২০ জন সুইপার ও ১০ জন গার্ড নিয়োগ দেন। নিয়োগপত্রে গার্ডে রয়েছেন আসলাম, ইউসুফ, সিদ্দিক, রিয়াজ, নজরুল, নুরুল ইসলাম, রাসেল, নাসির, সোহেল ও রেজাউল। এছাড়া ক্লিনার পদে আছে খালেদা, চন্দ্রবান, শাহিনুর, রুমানা, ঝর্ণা, মর্জিনা, শিরিন, অড্ডফা, ফিরোজ, বেবি, শেফালী, শিল্পী, আফসারা, মোজাহারুন ওরফে টিটু, জাহাঙ্গীর, মুকুলি বেগম, তাসলিমা, হারুন, আলাউদ্দিন ও মনির হোসেন। জানা গেছে, খান এন্টারপ্রাইজ ২০০৮ সাল থেকে একচেটিয়া একাজ পেয়ে আসছেন। বর্তমানে কার্যাদেশ অনুযায়ী জনপ্রতি শ্রমিকরা প্রতিদিন ৪৩০ টাকা করে মজুরি পাবেন। সেই অনুযায়ী মাসিক বেতন দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯শ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী বেতন না দিয়েই জনপ্রতি ক্লিনারকে দিচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আর সিকিউরিটি গার্ডদের দিচ্ছে ৪ হাজার টাকা বলে নিয়োজিত আউটসোর্সিং কর্মীরা জানান।
আউটসোর্সিংয়ে চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, এই চাকরিতে যে বেতন দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। তারা যেকোনো সময় চাকরি চলে যাওয়ার আতঙ্কে থাকেন। নিম্ন বেতন ও চাকরির অনিশ্চয়তার কারণে তারা কাজে মনোযোগী হন না। যার কারণে কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ইতোমধ্যে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রসঙ্গ তিনি টেনে এনে বলেন, ওই হাসপাতালে বেতন অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। আবার নিয়োগের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করেন, শ্রমিকের বেতনে ভাগ বসাতে তৈরি হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানি। এর পর রয়েছে ছুটি না পাওয়া কিংবা সময়মত বেতন না পাওয়ার বিড়ম্বনা।
আউটসোর্সিংয়ে নিয়েজিত ক্লিনার পদে চাকরিরত মোঃ ইসলাম জানান, ২০১১-১২ সালে প্রথম যখন যোগদান করি তখন বেতন ছিল ২ হাজার টাকা। গত ৬ বছরে তিন দফায় ৫শ টাকা করে বেড়ে বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছি। আর সিকিউরিটি গার্ড পাচ্ছেন ৪ হাজার টাকা। আর দুই ঈদে বোনাস হিসেবে এক হাজার টাকা করে দুই হাজার দিয়ে থাকেন।
আউটসোর্সিং : আউটসোর্সিংয়ের পক্ষে সরকারের যুক্তি হচ্ছে খরচ কমানো। সরকারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করে কোনো বেসরকারি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সাধারণত কোনো সরকারি অফিসে নির্দিষ্ট পদে দৈনিক, মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক দামে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিয়ে থাকেন। এ প্রক্রিয়াতে জনবল সরবরাহের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তার প্রত্যাশিত বেতন উল্লেখ করে টেন্ডারে অংশ নেন। সরকারি অফিসটি সর্বনি¤œ বেতন প্রস্তাবকারীকে জনবল সররাহের জন্য কার্যাদেশ দেয়। সরকারি সংস্থা টেন্ডারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিবদ্ধ টাকা পরিশোধ করে। এ কারণে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োজিত কর্মচারীরা সরকারের স্থায়ী কর্মচারী নন। এমনকি তারা অস্থায়ী কর্মচারীও নন। কর্মচারীটি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।
উল্লেখ্য, আবু নাসের হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বেতন ভাতা আত্মসাৎ নিয়ে নিয়োজিত শ্রমিকরা আন্দোলনে যান। এ আন্দোলনের কারণে ইতোমধ্যে কয়েকজন আউটসোর্সিং কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ নিয়ে নগরীতে মানববন্ধন পালন করা হয়।