আনোয়ারা ক্লিনিকের লাইসেন্স আছে, ডায়াগনস্টিকের নেই
কামরুল হোসেন মনি : খুলনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রমরমা ব্যবসার কারণে নগরীর বাইরেও উপজেলাগুলোতে এখন রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক একসাথে চালু করলেও দেখা গেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেই। এ ধরনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। অনেক সময় নামমাত্র স্বাস্থ্য বিভাগে লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেই বছরের পর বছর লাইসেন্সবিহীনভাবে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
সূত্র মতে, খুলনা মহানগরীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সকৃত ও লাইসেন্সবিহীন ৯৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে থাকলেও এর চেয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আরও বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি না নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সব প্রতিষ্ঠানে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কারও ওপর পড়ে না। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স দেওয়া হয়, সেগুলোও যথাযথ নিয়ম মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্লিনিকগুলোতে সার্বক্ষনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী নার্স ও অন্যান্য শর্ত পূরণ না করেই চলেছে, তেমনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় নেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান, নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। মাঝে মধ্যে র্যাবের অভিযানে ওই সব অসাধু ব্যবসায়ীরা আটক হলেও কিছুদিন পর আবার খুলে বসছেন।
নগরীর খুলনা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থিত আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের ভাই মোঃ এনায়েত রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদককে জানান, তার ভাইয়ের নামে ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পৃথকভাবে লাইসেন্স নেওয়া আছে। তিনি বলেন, আনোয়ারা নার্সিং হোম নামে লাইসেন্স করা হলেও পরবর্তীতে এফিডেভিট করে আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নাম রাখা হয়।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মহানগরীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাইসেন্সকৃত ও লাইসেন্স বিহীনসহ ৯৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন রয়েছে ২১টি, যা লাইসেন্সের প্রক্রিয়াধীন আছে। এ তালিকায় আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোথাও নাম উল্লেখ নেই।
একটি সূত্র জানায়, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেই ওই সব লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে নামমাত্র আবেদন করেই বছরের পর বছর এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
নগরীতে এমন একটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ভৈরব স্ট্রান্ড রোডের ডা. মো. আমান-উল্লাহ ক্লিনিক ও মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চলতি বছরে এই ক্লিনিকে নিয়ে দৈনিক প্রবাহে একটি অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলো। জন্মলগ্ন থেকেই লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসছিলো। যুগ পার হওয়ায় চলতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্লিনিকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ৮২ নম্বর তালিকায় মন্তব্য ঘরে লেখা আছে ‘লাইসেন্স নেই, প্রক্রিয়াধীন আছে’। কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতির জন্য আবেদন নেই। এদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে গেলেই স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন তদবিরের কারণে অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়েন। নগরীতে এরকম অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন করেই বছরের পর বছর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। অনেকেই আবার কোনো আবেদনই করছেন না লাইসেন্স এর অনুমতির জন্য।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, বর্তমানে কেউ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র, নারকোটিকস এর লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে আরও কিছু শর্ত আছে, সেগুলো পূরণ করেই আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর ওই প্রতিষ্ঠানে তদন্ত কমিটি যাবে। যদি হাসপাতাল করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের সব শর্ত পূরণ থাকে, তবেই তাকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।
খুলনা বিভাগের (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডাঃ সুশান্ত কুমার রায় রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে ক্লিনিকে ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালনাগাদ তথ্য রয়েছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স ও লাইসেন্সবিহীন তথ্য উল্লেখ রয়েছে। যারা লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছেন তাদের তালিকাও রয়েছে। এই তালিকার বাইরে কেউ যদি দাবি করে আমার লাইসেন্স রয়েছে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হবে। তার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর আনোয়ারা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু ঝুঁকি’ দৈনিক প্রবাহে প্রকাশিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেন। ওই হাসপাতালে বৃদ্ধ ইলিয়াসের কিডনী অপারেশন করার পর তার সেলাই করা ক্ষতস্থান থেকে মল বের হওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। বিশেষজ্ঞ সার্জারি চিকিৎসকরা জানান, কিডনী কেটে ফেলার সময় যদি চিকিৎসকের অসাবধনতাবশত অস্ত্রের আঘাতে খাদ্যনালীতে ফুটে হয়ে যায় তাহলে সেলাই করার পর ওইখান থেকে মল বের হবে। এছাড়া অন্য কোনো কারণে মল আসার সম্ভাবনা নেই। তবে চিকিৎসক ডাঃ শহিদুল ইসলাম মুকুলের বক্তব্য রোগীর ক্যান্সার হওয়ার কারণে এ সমস্যা।