অভিযানে ভাটায় মাদক বিক্রেতারা সক্রিয়
কামরুল হোসেন মনি : খুলনা মহানগরীর ৮টি থানা এলাকায় পাইকারি ও খুচরা মিলে ৪৫১ জন মহিলাসহ মাদক বিক্রেতাদের তালিকা রয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষ রয়েছে খালিশপুর থানা। এ থানায় খুচরা ও পাইকারি মিলে ১৩৩ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে। অন্য থানার মতো এই থানায় আশানুরূপ অভিযান না হওয়ায় মাদক বিক্রেতারা আস্তে আস্তে সক্রিয় হতে শুরু করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে খালিশপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরদার মোশারেফ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, মিল শ্রমিক এলাকায় হওয়ায় এখানে মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতাদের সংখ্যা বেশি। আমাদের প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, মাদকসহ বিক্রেতাদের গ্রেফতার করছি।
সূত্র মতে, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদক বিক্রেতাদের সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।
সূত্র মতে, মহানগরীর ৯টি থানাধীন এলাকার মধ্যে ৪৫১ জন পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রেতারা রয়েছে। এরা ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করে আসছে। অনেকে গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে এসে এ কাজে যুক্ত হচ্ছে। উল্লিখিত তালিকার মধ্যে অনেকে এ ব্যবসায় রয়েছে নুতন মুখ। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, জেলায় ২০ এর অধিক মাদক বিক্রেতা গডফাদার ও তাদের অধীনে ৫০ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে।
জানা গেছে, মাদক বিক্রেতার তালিকায় শীর্ষ রয়েছে খালিশপুর থানা এলাকা। এই এরিয়ায় খুচরা ও পাইকারি মিলে ১৩৩ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে। একইভাবে খুলনা থানা এলাকায় ৮৬ জন, সোনাডাঙ্গা থানা ৬৩ জন, লবণচরা থানা ৬৩ জন, দৌলতপুর থানা ৬৪ জন, খানজাহান আলী থানা ২৬ জন, আড়ংঘাটা থানা ৭ জন ও হরিণটানা থানা এলাকায় রয়েছে ৯ জন মাদক বিক্রেতা। এরা একাধিকবার বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
গোয়েন্দার সূত্র মতে, খালিশপুর থানায় উল্লেখযোগ্য মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা ফেনসিডিল বিক্রেতা মোঃ মুজিবর এর স্ত্রী সাফী বেগম, মুজগুন্নী এলাকায় গাঁজা বিক্রেতা হাকিম হাওলাদারের পুত্র মোঃ জামাল হাওলাদার, হাউজিং স্ট্রেট ৩০নং রোডে গাঁজা বিক্রেতা মৃত মহিউদ্দিন এর পুত্র মোঃ আওরঙ্গজেব, খালিশপুুর ২৬৪ রোডে হেরোইন বিক্রেতা মোঃ মুন্নার স্ত্রী মালা বেগম, হেরোইন ও ফেনসিডিল বিক্রেতা মৃত কাউস এর পুত্র মোঃ ছাত্তার ও মোঃ রব, গোয়ালখালীতে ফেনসিডিল বিক্রেতা মনিরের স্ত্রী ডলি বেগম, বঙ্গবাসী স্কুল এলাকায় হেরোইন বিক্রেতা মৃত সুলতান আহম্মেদ এর পুত্র মোঃ মুন্না হোসেন, আলমনগর এলাকায় গাঁজা বিক্রেতা আঃ রশিদের পুত্র মোঃ অলিয়ার রহমান, কাশিপুর এসএম রোড এলাকায় গাঁজা বিক্রেতা মৃত হাসান আলী পুত্র কবির হোসেন, জোড়াগেট কাদের সরদারের বস্তিতে গাঁজা বিক্রেতা মৃত আঃ আলীর পুত্র মোঃ ছালাম ওরফে ঢুন্ডা, মুজগুন্নী উত্তরপাড়ার বাসিন্দা গাঁজা বিক্রেতা মৃত আফতাব শেখের পুত্র মোঃ হাসান শেখ, উত্তর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা গাঁজা বিক্রেতা মৃত তোয়াব আলীর পুত্র মোঃ রুবেল শেখ, আলমনগর এলাকায় গাঁজা বিক্রেতা আঃ রশিদের পুত্র মোঃ জাহিদুল ইসলাম, গাঁজা বিক্রেতা মৃত মোসলেম ফকিরের পুত্র মোঃ দেলোয়ার হোসেন, লতিফুর রহমান ওরফে ভাইঢু এর স্ত্রী সেফালী বেগম, মুজগুন্নী এলাকায় গাঁজা বিক্রেতা মজিবর রহমানের স্ত্রী রাবি বেগম, কাদের সরদারের বস্তিতে মৃত আব্দুল বারীর পুত্র মোঃ সালাম, নতুন রাস্তা এলাকায় বাসিন্দা গাঁজা বিক্রেতা শামসুল হকের পুত্র মোঃ জাহিদ। এছাড়া খালিশপুরে হাতকাটা সালাম, হাউজিং এলাকায় শফি, চিত্রালী রেললাইনের পেছনে নুরু, চিত্রালী হল এলাকায় সাফি, নতুন রাস্তায় (ট্যাংকলরী এলাকা) শফিক, বিহারী কলোনীতে পারভেজ, টিঅ্যান্ডটি মোড়ে নাদিম ও তার স্ত্রী, জোড়াগেটে শরিফুল, চিত্রালী মোড়ে গামা ও তার স্ত্রী শাহিনা ও ৭নং ঘাট এলাকায় ফর্সা গামা, সালাম, কালা জামাল, গাউস উল্লেখযোগ্য মাদক বিক্রেতাদের তালিকা রয়েছে।
খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ‘খ’ সার্কেলের আওতাধীন ইয়াবা গডফাদার রয়েছে ২০ জনের মতো। যার অধিকাংশ ব্যবসায়ী হচ্ছে মহিলা। এর মধ্যে রয়েছে খালিশপুর থানাধীন রেলওয়ে বস্তিতে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনিসিডিল ব্যবসায়ী মৃত আব্দুস সাত্তার খন্দকার এর পুত্র মোঃ সাইফুল ইসলাম খন্দকার (৩০), উত্তর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ পারভিন (৩৫), পুরাতন রেলগেট এলাকায় মুজিবর রহমানের স্ত্রী মোঃ সাফিয়া বেগম (৩৫), খালিশপুর স্টেট নতুন কলোনীর বাসিন্দা মৃত শেখ মহিউদ্দিনের পুত্র শেখ আওরঙ্গজেব (৫০), মুজগুন্নি উত্তরপাড়া, পেটকা বাজার, মল্লিক বাড়ির বাসিন্দা হায়দার আলীর (৩নং স্বামী) স্ত্রী শিউলি আক্তার (২৭)।
খালিশপুর থানাধীন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিল শ্রমিক এলাকা হওয়ায় এখানে মাদকসেবি ও মাদক বিক্রেতারা বেশি অন্য থানার চেয়ে। সেই দিক থেকে এখানে মাদকবিরোধী অভিযান তেমন একটা চোখে পড়ছে না। যার কারণে মাদক বিক্রেতারা পূর্বে ন্যায় সক্রিয় রয়েছে।