৫০ বেডের নিরাময় কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ সরকারি কেন্দ্রটি ২৫ বেডে উন্নীতকরণ
কামরুল হোসেন মনি, খুলনাঃ খুলনা অঞ্চলে দিনকে দিন ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। সেই সাথে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যাও। একই সাথে মাদকের বিস্তার ও চোরাকারবার বেড়েই চলেছে। জনবল ও যানবাহন সঙ্কট থাকার কারণে সময়মতো অভিযান পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হচ্ছে মাদকদ্রব্য সংস্থা। এসব দিক বিবেচনা করে মাদকাসক্তের চিকিৎসাসেবা ও নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতাধীন ৫০ বেডের সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি ৫ বেড থেকে ইতোমধ্যেই ২৫ বেডে উন্নীত করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকারের নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়ার অংশ হিসেবে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব মোঃ মফিদুল ইসলাম খুলনা অঞ্চল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিস ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন। অপরদিকে ১০ জেলার মঞ্জুরিকৃত জনবলের বিপরীতে শূন্যপদে জনবল নেওয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে শূন্য পদে ইতোমধ্যেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৮৬টি শূন্য পদে জনবল নেওয়ার নিয়োগ রয়েছে। তিনি বলেন, বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে খুলনায় সরকারি নিরাময় কেন্দ্রটি ৫ বেড থেকে ২৫ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। এ জন্য আমরা নতুন বাসার সন্ধানে আছি। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নিজস্ব জমিতে খুলনায় ৫০ বেডের নতুন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র তৈরির জন্য জমিও দেখা হয়েছে। উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা রোডে ৩ একর জমির ওপর ৫০ বেডের মাদকাসক্তির হাসপাতালটির জায়গা নির্ধারণও হয়ে গেছে। ওই জমির কাগজপত্রগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সব বিষয়ে ও খুলনা সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসহ অফিসে রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপÍর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন শাখার পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ মফিদুল ইসলাম খুলনাঞ্চল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিস পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থিত মুক্তি সেবা নিরাময় কেন্দ্রটি পরিদর্শন ও কার্যক্রমগুলো পরিদর্শন করেছেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, খুলনা বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ও খুলনা অঞ্চলাধীন ১০ জেলায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস, মোংলা সমুদ্রবন্দর, যশোর স্থলবন্দর ও খুলনা আঞ্চলিক মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা রয়েছে ২১৬টি। এ পদের বিপরীতে ১৩০টি পদ পূরণ হয়েছে। বাকি ৮৬টি পদ দীর্ঘ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে যানবহন সঙ্কটও।
শূন্য পদের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক, উপ-পরিদর্শক, সিপাহী, অয়্যায়েলস অপারেটর, হিসাবরক্ষক, গাড়ি চালক, অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মী, প্রসিকিউটরসহ বিভিন্ন পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে ২০টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে ৬টি পদ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হিসাবরক্ষক, সিপাহী ৩ জন, পরিচ্ছন্ন কর্মীও নেই। এছাড়া খুলনা পণ্যগারে ৪ জন সিপাহীর পরিবর্তে ২ জন সিপাহীর পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য ১০ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরায় ৪ জন, বাগেরহাটে ৪ জন, যশোরে ৪ জন, বোনপোল স্থলবন্দরে ৩ জন, ঝিনাইদহে ৪ জন, মাগুরায় ৭ জন, নড়াইলে ৭ জন, কুষ্টিয়ায় ২ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১ জন, দর্শন ডিস্ট্রিলারীতে ১৮ জন, মেহেরপুরে ৬ জন জনবল সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেগুলোতে ২১টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে ১১টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে কাউন্সিলর, হিসাবরক্ষক, ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার, ল্যাব টেকনিশিয়ান, গাড়ি চালক, সহকারী স্টিউয়ার্ড ও নিরাপত্তাপ্রহরী রয়েছে।
জানা গেছে, সারাদেশে মাদক পাচার ও আসক্তি রোধে অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধির নতুন নতুন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন কেন্দ্র তৈরি উদ্যোগ গ্রহণ। যার মধ্যে খুলনায় একটি মাদকসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদকের অন্ধকার জগতে থেকে ৯৯ ভাগ মাদকাসক্তই চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের অভাবে আলোর পথে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা পথ হারিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। দেশে সংঘটিত অপরাধের ৭০ ভাগের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা সবার পক্ষে বেসরকারিভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। মাদকাসক্তদের বড় অংশই নিম্ন আয়ের। তাদের কথা চিন্তা করেই সরকার নতুন করে ঢেলে সাজানোর ওই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।