খুলনা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-২৩ - ১১:৩৯

আউটসোর্সিং কর্মরতদের বেতন বন্ধ : ঘুষের টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীর আকুতি

কামরুলল হোসেন মনি : স্বাস্থ্য খাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে আউট সোর্সিয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এটি হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অন্যতম উৎসহ। সম্প্রতি খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউট সোর্সিং কর্মচারি নিয়োগে কোটি টাকার বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাকুরি কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং আউটসোর্সিংয়ে কর্মকর্ত কর্মচারিরা বেতন না পাওয়ায় পর টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। ২১১ জন আউট সোর্সিং কর্মচারীর বেশির ভাগের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে আউটসোর্সিং কর্মরত-কর্মচারিদের বেতন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিজ দায়িত্বে কাজ করার জন্য আউটসোর্সিং এর কর্মচারিদের কাজ করতে বলেছে।
এদিকে আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেয়া তালিকা পাশ কাটিয়ে জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশির ভাগ নিয়োগই টাকার বিনিমিয়ে সিভিল সার্জন-এর দপ্তর থেকে দেয়া হয়েছে। টাকার লেনদেনের বিষয়টি ভুক্তভোগির বক্তব্য রেকর্ড এ প্রতিবেকের সংরক্ষিত আছে।
আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত রাসেল কবির। তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি এই প্রতিবেদক বলেন, সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মরত তজিবুর রহমান তাকে হাসপাতালে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে সরকারি চাকরি দেয়া কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। এতে সে রাজি হওয়ায় চুক্তিমোতাবেক রাসেল কবির গ্রামের জমি ২ লাখ টাকা জমি বিক্রি ও সমিতি থেকে লোক তুলে  তজিবুরকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করে। দেয়ার সময় তজিবুর তার কাছ থেকে স্ট্যামে স্বাক্ষর করে নেন। এর পর রাসেল আউটসোর্সিংএ চাকরি হয়। চাকরি হওয়ার পর থেকে দাবিকৃত আরও ১ লাখ ২৫ টাকা মো: তজিবুর তাকে চাপ সৃষ্টি করছে। রাসেল কবির এ প্রতিবেদককে বলেন, যখন জানতে পারলে এটা সরকারি চাকরি না, আর বর্তমানে বেতন অনিশ্চয়তা রয়েছে। তখনই তজিবুরকে ফোন দিতে থাকি। কিন্তু সে গত দুই দিনে আমার ফোন রিসিভ করছে না। এমনি বাইরে থেকে ফোন দিলেও তাও ধরছেন না।
গত ২৬ মে তে ২১১ জন আউচসোর্সিং চাকুরিতে যোগ দান করে। এখনো পর্যন্ত কেউ বেতন পাননি। বেতন না পাওয়ার ফলে ওই রাসেল কবিরের সন্দেহ হলে জানতে পারে এটা সরকারি চাকরি না। চুক্তিভিক্তি চাকরি। ওয়ার্ক পার্মিট শেষ হওয়ায় বেতনও অনিশ্চিত হয়ে গেছে কর্মচারিরা জানা জানির পর সবাই আতংকে রয়েছে। রাশেল কবিরের মতো যারা জমি-জমা ধার দেনা করে টাকা দিছেন তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। রাসেল কবির বলেন, মোঃ তজিবুরকে ফোন দিলে সে এখন ফোন ধরে না।
জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তর। ১২ মে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। টেন্ডারের মাধ্যমে ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাজ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি জনবল সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারির স্মারকের এ নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ ঠিকাদারী তালিকার অনুযায়ী হতে হবে। কিন্তু তার তালিকা অনুযায়ী কর্মওু কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে প্যাডে কোরো নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইখতিয়ার উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে ২০১৯ সালে ১২ মে ওর্য়ার্ক ওয়াডার পাই। ২৬ মে তালিকা প্রদান করি। সিভিল সার্জন থেকে দপ্তর থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়। নিয়োগ হলে আমার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্যাডের পরে নিয়োগ হওয়ার কথা । কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ওয়ার্ক পার্টমিট রয়েছে। এটা জুনেই শেষ হয়ে গেছে। এটা পুনরায় রেনু করতে হলে মন্ত্রণালয় থেকে পুরনায় রেজেস্টিশন কররা নিয়ম রয়েছে। তা না হলে রেনু হবে না। যার কারণে কারো বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা কর্মরতরা পাবে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এর চেয়ে আরো ৫’ টাকা বেশি বেতন পাবে। বছরে ঈদ উৎসব বোনাস পাবেন ৮ হাজার ২৪০ টাকা আর বৈশাখী ভাতা পাবের বোনাসের শতকরা ২৫ ভাগ এক হাজার ৬৫০ টাকা।
যারা কর্মরত আছে তাদেরকে বলা হয়ে নিজ দায়িত্বে কাজ করতে হবে। যদি রেনু হয় বেতন হবে তা না হলে বেতন হবে না। ঠিকাদারাী হিসেবে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে আমি তালিকা দিছি। কিন্তু আমার তালিকা অনুযায়ী কর্মচানি নিয়োগ হয়নি। যারা কর্মরত আছে তারা আমার প্রতিষ্ঠানের প্যাডে তাদের কোন নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। সিভিল সার্জনের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়।
যারা নিজ দায়িত্বে কাজ করলে করবে না করলে আমার কিছুই করার নেই। সরকার টাকা না দিলে আমি কি ভাবে দেবো।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন ব্যক্তির কাছে  টাকা নিলো আমার জানা নেই। যদি সে কাউকে টাকা দিয়ে থাকে তাকে ধরবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্যাডেতে নিয়োগপত্র দেয়া হয়ে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জনৈক মো: তজিবুরকে রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত দফায় দফায় ফোন দিলিও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোনটি বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে এসব নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হাফিজুর রহমান, পরিসংখ্যানবিদ, হিসাব রক্ষক, সিভিল সার্জন অফিসের এমএলএসএস থেকে স্টেনোটাইপিস্ট হওয়া এক ব্যক্তি ও স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের প্রধান সহকারী, ব্লাড ব্যাংকে কর্মরতসহ একটি চক্র। ওই চক্রের মাধ্যমে যাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তাদেরকেই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়ে পুরো বিষয়টি গোপনীয়তা ভাবে রক্ষা করে। আবার গত ৩০ মে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও সিভিল সার্জনের পদায়নপত্রে স্বাক্ষর করা হয় ২৬ মে।
সিভিল সার্জন স্বাক্ষরিত গত ২৬ মে’র পদায়নপত্রের রয়েছে , টুটপাড়া সদর আরবান ডিসপেনসারীতে ১১ জন, ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৩১ জন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন, বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন, বিভিন্ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১২ জন, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন, কপিলমুনি ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে তিনজন, পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন এবং দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন পদায়ন করা হয়।