“ঘরে থাকলে ক্ষুধায়, বের হলে করোনায়” মৃত্যু যেন তাড়া করে চলেছে

প্রকাশঃ ২০২০-০৪-০২ - ১৯:৫৮

আজগর হোসেন ছাব্বির : “ঘরে থাকলে ক্ষুধায়, বের হলে করোনায়” মৃত্যু যেন আমাদের তাড়া করে চলেছে। তাইতো জীবনের ঝুকি নিয়ে জীবিকার সন্ধানে বের হতেই হচ্ছে। দাকোপে করোনা পরিস্থিতিতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হওয়া হতদরিদ্রদের এমনই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
খুলনার উপকুলিয় জনপদ দাকোপের ৮০% মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। কর্মহীন এ অঞ্চলের একটি বড় অংশ জীবিকার তাগিদে দেশের বড় বড় শহরে নানা পেশার সাথে জড়িত থাকে। বর্তমান করেনা পরিস্থিতিতে সেই কর্মজীবি মানুষ গুলো কর্মহীন হয়ে ঘর বন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ১ লাখ সাড়ে ২২ হাজার ভোটার এবং ২ লক্ষাধীক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দাকোপে এ পর্যন্ত করেনা মোকাবেলায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত চাল বিতরনের শেষ পর্যায়ে। কিন্তু দাকোপে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দের পরিমান একেবারেই অপ্রতুল। এ যেন সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মত। বিভিন্ন এলাকায় খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি গ্রামে চাহিদার ২০/৩০ ভাগ মানুষ এসেছে খাদ্য সহায়তার আওতায়। বাকীরা না পাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃংক্ষল পরিবেশ। ক্ষেত্র বিশেষ জনপ্রতিনিধিদের এই চাল বিতরনে নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এমনকি জনতার চাপ সামলাতে ১০ কেজির স্থলে ৫/৬ কেজি করে দিয়ে অধীক সংখ্যাক লোককে সুবিধা ভোগীর আওতায় আনার চেষ্টা করছেন তৃনমুলের জনপ্রতিনিধিরা। আবার এই সুযোগে কেউ কেউ বিতরনে অনিয়মের সুযোগ নিচ্ছেন। দাকোপে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে ব্যক্তি বা দলীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, শিশুদের জন্য আমরা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু খাদ্য সামগ্রী বিতরন করার খবর পাওয়া গেছে। সরকারী সহায়তায় পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল বরাদ্দ থাকছে, এর বাইরে স্থানীয় প্রশাসন আলু ডালের কিছু ব্যবস্থা করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য চাহিদা মিটাতে তারা দিশেহারা। উপজেলার সুতারখালী ইউপির নলিয়ান গ্রামের দিন মজুর গফ্ফার ফকির বলেন, একদিন আয় না করলে সংসার চলেনা, অদ্যবধী কোন সহায়তা মেলেনি। করেনার ভয়ে অভুক্ত স্ত্রী সন্তানের কষ্ট না দেখে বের হয়ে পুলিশের মার খেলেও সহ্য হবে। বাজুয়া চুনকুড়ি গ্রামের শ্রমজীবি মজিদ শেখ, আনছার মোল্যা, বানীশান্তা ইউপির দলিত সম্প্রদায়ের নাপিত পেশার সোহেল বিশ্বাস, সুপ্রভাত গাইন অনুরুপ অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, ঘরে বাইরে সব জায়গায় মৃত্যু যেখানে তাড়া করছে সেখানে জীবন বাঁচাতে রাস্তায় বরে হলে ক্ষতি কি ? সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম ফকির জানায়, আমার ইউনিয়নে ১০ হাজারের উপরে পরিবার আছে। যার প্রায় ৮৫% ভাগ দরিদ্র। এ পর্যন্ত পাওয়া ৭ টন চাল ৭ শ’ পরিবারের মাঝে বিতরন করেছি বাকীদের কিভাবে বাঁচিয়ে রাখবো ? কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল এবং পানখালীর চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কাদের অনুরুপ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, খাদ্য সহায়তা না বাড়ালে কেবল আইন দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখা যাবেনা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে ৫০ টন ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমরা ব্যক্তিগত নানাভাবে ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করছি, তাছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজির নায্য মুল্যের চাল বিক্রি চলছে। তবে বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা বরাদ্দে উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে কেবল খাদ্য সংকট নয়, কিছু সংখ্যাক কৌতুহলী উদাসীন জনতা প্রয়োজন অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন। এই মুহুর্তে উদ্বেগের আরেকটি কারন দাকোপে সিনিয়র পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের খাদ্য বিতরন অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোক সমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও বিতরনকালে নিয়ম মেনে চলার ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে কিন্তু সেখানে বাস্তবচিত্র থাকছে ভিন্ন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাকোপে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৩৯ জন। এর মধ্যে বিদেশ ফেরত ৪৮ এবং দেশের অভ্যান্তরীন কোয়ারেন্টাইন সংখ্যা ৯১ জন।