চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার এস আই নাছিরের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-১৭ - ০১:৪১
চট্টগ্রামের বন্দর থানার বহুল আলোচিত এস আই নাছির

সুজন দাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার এস আই নাছিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীদের হয়রানি, মাদক কারবারসহ একাধিক অভিযোগের তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা। জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানাধীন মধ্যম হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো: নাছিরের বিরুদ্ধে মাদক, চোরাচালান, জুয়ার আসর, ও পতিতা কারবারিদের সাথে সখ্যতা ও সাধারণ মানুষকে ফাঁড়িতে ধরে এনে টাকা আদায় সহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। এই পুলিশ উপ-পরিদর্শক মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে কোন মামলা না দিয়ে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। আইসি হয়ে ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকেই এসব অপকর্ম করায় খোদ পুলিশ প্রশাসনের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থানাধীন মধ্যম হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই নাছির কয়েক মাস আগে যোগদান করেন ফাঁড়ির আইসি হিসেবে। এরপর থেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা ও জুয়ার আসর থেকে আর্থিক সুবিধাসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। এই ফাঁড়ির আশে পাশের মাদক স্পট, ও জুয়ার আসর ও পতিতা ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ যেনো লেগেই আছে। তার এই অপকর্মে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে এই ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোরশেদ, এএসআই আনোয়ার ও এএসআই মুশফিকুর। যদিও সম্প্রতি তার অপকর্মের ব্যাপারে অনলাইন পত্রিকায় বেশ লেখা লেখি হচ্ছে। পুলিশের একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও ভয় ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগে এস আই নাছিরের নাম রয়েছে বলেও জানা যায়। তবে তার এ অপকর্মে খোদ পুলিশ প্রশাসনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, এসআই নাছির নিজেকে কমিশনারের লোক দাবি করে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। যেন তার কাছে অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা অসহায়! বেপরোয়া হয়ে ওঠা উপপরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত মো: নাছির নামের এই কর্মকর্তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া খুটাখালী গ্রামে। জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে কামিয়ে নিয়েছেন কাড়ি কাড়ি অবৈধ টাকা। সেই টাকায় কয়েক বছরে প্রাইভেট গাড়িসহ বিপুল ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। পদোন্নতি পাওয়ার পর আলাদিনের চেরাগ পেয়ে তিনি এখন টাকার কুমিরে পরিনিত হয়েছে। এসআই নাছিরের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কৃর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেও এখনো কোনো সুরাহা পায়নি বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের বিষয়ে কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে তার বিরুদ্ধে নিউজ হলে নড়বড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পর তিনি নাম সর্বস্ব কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে টাকার বিনিময়ে তার পক্ষে নিউজ করে নিজেকে অনেক বড় ফেরেস্তা দাবী করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। যাতে তার অপকর্মের এই অভিযোগ গুলো ঢেকে যায়। সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় দোকানদার, হোটেল ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মানুষকে ফাঁড়ির এসআই মো: নাছির ও অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের ভয়ে কেউও মুখ খুলেন না, আবার কেউ সাহস মুখ খুলেও পরের দিন তাদের ফাঁড়িতে ধরে এনে চালাই নির্মম নির্যাতন। সূত্র জানাই, এসআই নাছিরের বর্তমানে বিস্তর জমি, প্রাইভেট কার ও বিপুল নগদ অর্থের মালিক। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পদের মূল্য প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এবং তিনি টেকনাফ-কক্সবাজার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি এবং তার সহযোগিতাই তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করে বলে জানা গেছে। তার সাথে আজকালের দর্পণ নামের একজন সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এক দালালও কাজ করে। তার নাম এম নজরুল ইসলাম, তার কাজ হলো এলাকায় ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এবং বিভিন্ন অসামাজিক কাজ, মাদক ও পতিতা ব্যবসার কর্তাদের কাছ থেকে মাসিক মাসোহারা কালেকশন করা, পরে এই টাকা এসআই নাছির বাগবাটোয়ারা করেন। কিছু টাকা নজরুলও পেয়ে থাকেন। এছাড়া নারীদের দিয়েও মামলার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় টাকা। গত এক মাসে এ পুলিশ ফাঁড়িতে এরকম অন্তত ১০টির মতো ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। সিএমপিতে কর্মরত সাবেক এক উপ-কমিশনারের পরিচিত একজনের কাছ থেকেও ফাঁড়িতে দুইদিন আটকে রেখে টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মো. রফিক নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে ধরে এনে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। তাকে দুই দিন ধরে থানায় আটকে রেখে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন ওই ভুক্তভোগী। রেজাউল নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, গত ১৫ দিন আমাকে এএসআই মোরশেদ ও মুশফিকুর ধরে নিয়ে যান। আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। ৮ জুলাই জসিম ও নাসির নামে দুই মুদি দোকানদারকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন এস আই নাছির ও অন্যান্যরা। সূত্র জানায়, মধ্যম হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. নাছিরের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতরেও চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছেন মো. বাদশা তালুকদার নামে এক ব্যক্তি। সে এসআই নাছিরের বিরুদ্ধে অবৈধ টমটম, ইজিবাইক থেকে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ করে তার শাস্তি দাবি করেছেন। এই ব্যাপারে এসআই মো: নাছির অভিযোগ অস্বীকার করে সকালের-সময়কে বলেন, এই ফাঁড়িতে আসার জন্য অনেক পুলিশ এসআই প্রতিদ্বন্দ্বীতা শুরু করে দিয়েছে। তারা টাকা নিয়ে বসে আছে, তারা আমার বিরুদ্ধে নিউজ করে ফায়দা লুটতে চায়, ওরা জানে না আমার হাত কত লম্বা, কমিশনার স্যার তাদের তলব করেছে, আমার জায়গা থেকে কেউও আমাকে এক চুল ও নড়াতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ফাঁড়িতে কাউকে নিয়ে আসা হয় না। যাদের নিয়ে আসা হয় তারা কোনো না কোনো অপরাধী এই বিষয়টি আমার সিনিয়র স্যাররা জানেন, সব টাকাতো আমি খেয়ে পেললে হবে না স্যারদেরও দিতে হয়। আপনি ফাঁড়িতে আসেন চাঁ খেয়ে যান, এখানেই বসে আপনাকে সব বুঝিয়ে বলব। জানা যায়, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়াই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসআই নাছির। যার কারণে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর জোনের সাবেক