ঢাকা অফিস : চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং; বিমানবন্দরে তাকে উ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সকাল ৮টা ৮ মিনিটে ড্রুক এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে লোটে শেরিংকে অভ্যর্থনা জানানোর পর সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি নেওয়া লোটে শেরিংয়ের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এবারের সফরে বাংলাদেশের বর্ষবরণের উৎসবেও শামিল হবেন তিনি। আর গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটিই বিদেশি কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম বাংলাদেশ সফর। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ভুটানকে বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া ছাড়াও কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আশা করছেন সরকারের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশ ভুটানের সঙ্গে সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সেভাবে বাড়েনি। ভুটান থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৩০ লাখ ডলারের মত। দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে স্থলপথে ভারতের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ভুটানকে বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে ভুটান সফরে গেলে দেশটির স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল সে দেশের সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভুটানে চিকিৎসক নেওয়া এবং বাংলাদেশে ভুটানের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছিল সে সময়। লোটে শেরিং তার সফরের শুরুতেই গতকাল শুক্রবার সকালে ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। তারপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি। দুপুরে বারিধারায় ভুটান দূতাবাসে যান লোটে শেরিং। বিকালে যান সবুজবাগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেটে শেরিংকে অভ্যর্থনা জানাবেন শেখ হাসিনা। দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। পরে তার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন। রোববার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর। ভোরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার আয়োজনে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। সেদিন নিজের পুরনো বিদ্যাপীঠ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অষ্টাদশ ব্যাচের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং এমবিবিএস পাস করার পর বাংলাদেশেই সার্জারিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। দেশে ফিরে চিকিৎসক পেশায় সরকারি চাকরিতে যোগ দেন লোটে শেরিং। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত জেডিডব্লিউএনআরএইচ অ্যান্ড মঙ্গার রিজিওনাল রেফারেল হসপিটালে ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার দল ডিএনটি চমক সৃষ্টি করে। সেই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেকের দলকে হারিয়ে নভেম্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হন ডা. লোটে শেরিং।