ঢাকা অফিস : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এবার এইচএসসি পাস করলেন সেই অদম্য গৃহিণী মলি রাণী। বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ছেলের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আলোচিত সেই মা মলি রাণী ৩৭ বছর বয়সে এবার এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেছেন।
বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে তিনি জিপিএ ৩.৯৬ পেয়ে এইচএসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। চলতি বছর বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন মলি রাণী। তিনি ওই কলেজের উদ্যোক্তা উন্নয়ন ট্রেডের ছাত্রী ছিলেন।
এদিকে মলি রাণীর ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু এসএসসি পাসের পর নাটোর টিএমএস পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে বর্তমানে চতুর্থ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন।
এর আগে, ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ছেলের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন মা মলি রাণী। এসএসসি পরীক্ষায় তিনি পেয়েছিলেন জিপিএ ৪.৫৩ এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু জিপিএ ৪.৪৩ পান। সে সময়, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মলি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডের এবং ছেলে মৃন্ময় বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডের শিক্ষার্থী ছিলেন।
উদ্যোমী ওই নারী মলি রাণী কুন্ডুকে নিয়ে ২০১৭ সালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আলোচনায় আসেন তিনি। সে সময় মলি রাণীর সাফল্যে তৎকালীন সাংসদ অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এবং সদ্যপ্রয়াত বইপ্রেমী পলান সরকার তার বাড়িতে ছুটে আসেন। আর তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মা ও ছেলেকে ডিসি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে ল্যাপটপ উপহার দেন।
সে সময় উপজেলা প্রশাসন মা দিবসে মলি রাণীকে সংবর্ধনা দেয়। এরপর, কলেজে ভর্তি হলে অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহম্মেদ বিনা খরচায় তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেন।
মলি রাণী জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার মিন্টুর সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর সাংসারিক কাজের ভারে তার আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। এর মধ্যে, দু’টি সন্তানের জন্ম দেন। বড় ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু এবং ছোট ছেলে পাপন কুন্ডু। ছেলেদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন তার নিজের পড়ালেখা জানা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই স্কুলে ভর্তি হন মলি রাণী। এরপরের গল্প শুধুই সাফল্যের।