সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া (খুলনা) : ভাই’রে, ভালোই ছিলাল আমরা। রাত হোক বা দিনে হোক চলাচলে কোন সমস্যাই ছিল না। ভ্যানে-নছিমনে করে তরকারি মাছ নিয়ে ডুমুরিয়ায় যেতাম বিক্রি করতে। খুব সুন্দর ভাবে ছিলাম এই জনপদের মানুষ। কিন্তু এখন আর আমাদের মনে সেই সুখ নেই। নদীর ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় পারাপার নিয়ে রয়েছি মহাবিপদে। কবে যে ফিরবে ভাগ্য তাও রয়েছে অজানা। কথাগুলো এমনি ভাবে বলছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলার কাকমারি-কাজিরুহুলা খেয়াঘাট পার হওয়া যাত্রীরা।
জানা গেছে, উপজেলার সাহস ও শোভনা এই দুই ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রানদী। প্রবাহমান কাল থেকেই খেয়া নৌকায় ছিল পারাপারের ব্যবস্থা। নব্বই দশকের দিকে ওই নদীতে জমতে থাকে পলি। অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে যায় নদীর দৃশ্যপট। পলি জমতে জমতে বিশাল আকৃতির সেই ভদ্রানদী রুপ নেয় ছোট্ট খালে। যা পার হতে মানুষ পড়েন বিপাকে। তখন সংকট নিরাসনে নদীতে নির্মিত হয় সেমিব্রীজ। আর ওই ব্রীজেই ফিরে যায় ভাগ্য। যাওয়া-আসায় ছিল না কোন ভোগান্তি। এরই মধ্যে শুরু হয় নদী খনন প্রকল্পের কাজ। ড্রেজার মেশিনে কাটা হয় ব্রীজের তলদেশের মাটি। খননের শেষে নদী মুখ উন্মুক্তের পরেই ব্রীজটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। অবশেষে আম্পানের রাতে নদীর স্রোতে হারিয়ে যায় ব্রীজের অস্তিত্ব। সেই থেকে ওই জনপদের মানুষের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। চলাচলের জন্য এখন একমাত্র সম্বল হল ছোট্ট নৌকা।
এ বিষয়ে সাহস ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য নুর মোহাম্মদ মোড়ল বলেন, নদীর এই ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের এ পারের লোকজনের জমি-ক্ষেত হল ওইপারে। লোকজন তাদের জমিতে ঘের করে ও ক্ষেতে ফসল লাগিয়ে বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। বর্তমানে মানুষগুলো চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
শোভনা ইউপি চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য বলেন, শোভনার কাকমারি, বলাবুনিয়া, কদমতলা, পাতিবুনিয়ার মানুষের যাতায়াতের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ রুট ছিল এটা। ওখানকার মানুষ খুব সহজে ও আল্প সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে যেতে পারতো। কিন্তু ব্রীজটি না থানায় অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, আমরা এই মুহুর্তে কিছুই করতে পারছি না। তবে ওখানে আবার ব্রীজের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়া সাময়িক ভাবে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহনাজ বেগম বলেন, ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ায় জনগণের পারাপারে ভোগান্তি, এমন ধরনের কোন কথা আমাকে কেউ বলেনি। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।