দাকোপে অপ্রতুল ত্রান বিতরনে হিমশিম খাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা

প্রকাশঃ ২০২০-০৪-০৪ - ১৭:২৫

আজগর হোসেন ছাব্বির : খুলনার উপকুলিয় অনুন্নত উপজেলা দাকোপ দু’টি বিশেষ কারনে আছে করোনার ঝুঁকিতে। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গঠিত যৌথ টাস্কফোর্স দিনরাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মহীন মানুষের মাঝে এ পর্যন্ত পাওয়া ৫০ টন চাল ও নগত ৭৫ হাজার টাকার মালামাল বিতরন করা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পাওয়া অপ্রতুল ত্রান সহায়তা বিতরনে হিমশিম খাচ্ছেন তৃনমুলের জনপ্রতিনিধিরা।
দেশ জুড়ে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করার পর থেকে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত, বাজার মনিটরিং, ত্রান সহায়তা বিতরনসহ অন্যান্য নির্দেশনা বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তা সত্বেও দু’টি বিশেষ কারনে দাকোপে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। উপজেলাটি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত হওয়ায় এখানকার একটি বড় অংশ মানুষ নানা কারনে সারা বছর অবৈধ পথে প্রতিবেশী দেশ ভারকে যাতায়াত করে থাকে। ফলে এদের বিষয়ে বিদেশ ফেরত হিসেবে সরকারের কাছে কোন তথ্য থাকেনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এদের খুজে বের করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রতিবেশীদের সচেতনভাবে দেওয়া তথ্যের উপর অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে। এটি একটি ভীতির কারন। অপরদিকে উপজেলায় গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বেশ কিছু গ্যাস কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সকল কোম্পানীর অধিকাংশ জনবল চিটাগংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। তা ছাড়া প্রতিদিন গ্যাস পরিবহনের ট্রাকে কর্মরত শ্রমিকরা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। ফলে তাদের নিয়ে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায়। গ্যাস একটি নিত্যুপ্রয়োজনীয় জ্বালানী পন্য হওয়ায় প্রশাসন এদের বিষয়ে খুব বেশী কঠোর হতে পারছেনা। তবে সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের সতর্ক ভাবে কাজ করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার দাকোপ উপজেলায়। করোনা পরিস্থিতির সৃষ্টি থেকে অদ্যবধী সরকারীভাবে পাওয়া ৫০ টন চাল এবং নগত ৭৫ হাজার টাকার মালামাল ৫১০০ পরিবারের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের জানায়, প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার ৭৯৯ পরিবারের জন্য সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সহায়তা ৫১০০ পরিবারে বিতরন করা হয়েছে। তবে পূর্বের চাহিদা তালিকাসহ মোট ২৭ হাজার পরিবারের জন্য ত্রান সহায়তা চেয়ে নতুন করে আবেদন করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হক নিজামীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার পর্যন্ত উপজেলায় মোট কোয়ারেন্টাইনে আছে ১৫১ জন। এরমধ্যে বিদেশ ফেরত ২৮ বাকীরা দেশের অভ্যান্তরীন বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত। দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় সন্দিগ্ধ নিয়ে যে গুজব শোনা যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এখন পর্যন্ত দাকোপে আতংকিত হওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের মধ্যে যাদেরকে বেশী ঝুঁকি মনে করা হচ্ছে তাদেরকে বিশেষ নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ পর্যবেক্ষন পেলে এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা যাবে। ত্রান সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির কারনে একবারেই কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর ক্ষুদ্র পেশাজীবি শ্রমজীবিদের এই সহায়তার আওতায় আনা। যে কারনে উপজেলায় সরকারের ভিজিডির সহায়তা প্রাপ্ত ৩ হাজার ৪১১ পরিবার আপাতাত ত্রান সহায়তার আওতায় আসবেনা। এ ছাড়াও মাসে ৩০ কেজি হারে ১০ টাকা মুল্যের রেশনিং চাল সংগ্রহের সুবিধাভোগী আছে ১৪ হাজার ৬৯৫ পরিবার। তবে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সকলকে সহায়তা দেওয়া হবে। এ দিকে উপজেলা সদর চালনা পৌর এলাকার মধ্যবিত্তরা করোনার প্রভাবে পড়েছেন মহাবিপদে। কারন এখানে নেই কোন রেশনিং চালের সুবিধা, অন্যদিকে ত্রানের খাতায় ও তাদের নাম থাকছেনা। এই শ্রেনীর দাবী পৌর এলাকায় বর্তমানে অন্তত রেশনিং ব্যবস্থাটা চালু করা হোক।