আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : খুলনার দাকোপ উপজেলায় ফেব্রুয়ারীর প্রথম ১৫ দিনে ১টি অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ ২ টি রহস্যজনক আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে নানামুখী গুঞ্জন চলছে। ভিকটিমদের স্বজনরা রহস্যজনক এই মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবী করছে। তবে পুলিশ বলছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট কিছু বলা যাবেনা।
উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের আমিন উদ্দিন গাজীর পুত্র আঃ জলিল গাজী (৭০) প্রতিদিনের ন্যায় ৩ ফেব্রুয়ারী ভোররাতে বাড়ী হতে পানখালী দাতনেমারী বিলে নিজের মৎস্য ঘেরে যায়। দিন শেষে সন্ধ্যার পর তার বাড়ী ফেরার কথা। কিন্তু সেদিন রাতে বাড়ী না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা সাম্ভব্য সব জায়গায় খুজতে থাকে। পরেরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে নিজ ঘেরের ডোবায় তার লাশ পাওয়া যায়। লাশের এক চোখ ও গাল দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এ ছাড়া কানের লতিতে সামান্য ক্ষতের চিহ্ন অনুভুত হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যু মামলার বাদী মৃতের পুত্র আমান গাজী বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের হিসাবে প্রতিবেশী স্বজনরা আমার পিতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে আমার ধারনা। আমি সন্দেহভাজনদের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মামুনকে জানিয়েছি। সন্দেহভাজনরা অনেকেই ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া।
অপরদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাতে স্বামীর বাড়ীতে ঘরের আড়ায় রশিতে ঝুলে শান্তনা রায় নামের এক কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করে বলে জানা যায়। প্রেমের সম্পর্কের সুত্রে দাকোপের তিলডাঙ্গা গ্রামের পরিক্ষিত রায়ের পুত্র পার্থ প্রতিম রায়ের সাথে ধোপাদী গ্রামের বিধান রায়ের কন্যা শান্তনা রায়ের গত ডিসেম্বর ২০১৯ বিয়ে হয়। পার্থ কৃষি ডিপ্লোমার ছাত্র এবং শান্তনা ইংলিশ অনার্সের ছাত্রী। পার্থের পরিবার জানায়, বিয়ের পূর্বেই প্রেমের সম্পর্কের কারনে দু’জনে অবাধে মেলা মেশা করতো। এমনকি তাদের বাড়ীতে শান্তনা রাত্রী যাপন করতো। বিয়ের কিছুদিন আগে পার্থের বাড়ীতে এসে থাকাকালীন দু’জনের মান অভিমানের জেরে শান্তনা এক সাথে ২০ টি জন্ম বিরতি করন ফেমিকন ট্যাবলেট খেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। পার্থের প্রতিবেশী মামী আল্পনা রায় বলেন, দু’জন প্রায় ঝগড়া বিবাদ করতো, এমনকি ঘটনার দিন দু’জনের মাঝে ঝগড়ার বিষয়টি তিনি জানেন। আত্মহত্যার সংবাদে সেখানে যাওয়া শান্তনার কাকা বিপুল রায় পারিবারিক কলহের তাদের মেয়েকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়ার দাবী করে বলেন, আমরা অনেক অনুরোধ করলেও ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এনে আমাদের লাশটি দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। লাশের ঠোটে ও মুখের দু’পাশে রক্ত জমাট বাঁধা ফুলা জখমের চিহ্ন ছিল। তিনি বিষয়টি হত্যাকান্ড হিসাবে দাবী করে বলেন, আমরা ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে ময়না তদন্ত রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার ভোররাতে পূর্ব বাজুয়া নিজ বাড়ীর পাশে সজিনা গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় গৌরপদ মন্ডল (৫২) এর লাশ পাওয়া যায়। ৭ ভাইয়ের মধ্যে গৌরপদ ছিলেন অবিবাহিত। পরিবারের দাবী কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকায় বিরক্ত হয়ে হয়ত আত্মহত্যা করেছে। তবে এলাকায় গুঞ্জন আছে নিজের ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ককে সন্দেহের চোখে দেখা হত। যে কারনে এই আত্মহত্যা রহস্য বলে ধারনা করা হচ্ছে। আকর্ষিক দাকোপে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। এলাকাবাসী ১৫ দিনে ঘটে যাওয়া এই মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবী জানিয়ে বলেন, সঠিক তথ্য বেরিয়ে না আসলে এবং যদি অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে তবে তার বিচার না হলে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়ে যাবে।