পাইকগাছা প্রতিনিদি : খুলনার পাইকগাছায় নানা সমস্যার পরেও প্রায় ১৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশ। উন্নত জাতের বীজ সংকট। প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে চারা গজায়নি। এ ছাড়া অসময়ে অতিবৃষ্টিতে ৩০-৪০ হেক্টর জমির চারা অঙ্কুরোদ্গমের পর মারা যায়। গত বারের তুলনায় চলতি মৌসুমে কৃষি অধিদপ্তরে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে প্রায় ১১০ হেক্টর কম জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় তরমুজ চাষের উপযোগী মাটি ও পরিবেশে গত কয়েক বছরে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। লোকসান কম ও দাম ভাল পাওয়ায় প্রতি বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ হয় তরমুজের। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর কৃষি অধিদপ্তরের ২১০ হেক্টর লক্ষমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছিল ৪১০ হেক্টর জমিতে। তবে এবছর লক্ষমাত্রা ৪১০ হেক্টর থাকলেও নানা সংকটে আবাদ হয়েছে প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যমতে, উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে ২২নং পোল্ডার ও গড়-ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া ও কুমখালীতে দীর্ঘ দিন যাবৎ তরমুজ চাষ করছেন সেখানকার কৃষকরা। তবে এবার নানা প্রতিকূলতায় গড়-ইখালীতে তরমুজের আবাদ হলেও তা শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
স্থানীয়রা এফএনএসকে জানান, এখানকার তরমুজের ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদা ও দাম অপেক্ষাকৃত বেশী। সুন্দরবন উপকূলীয় ও পরিবেশ বিধ্বংসি লবণ পানি চিংড়ি চাষ দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে, এমন পরিবেশে তরমুজের আবাদ স্থানীয় কৃষকদের নতুন আলোর পথ দেখাচ্ছে। তরমুজ চাষে শুধু চাষীরাই নয়, উৎপাদন মৌসুমে সেচ ও ক্ষেত পরিচর্যায় কর্মসংস্থান হয় এলাকার শ্রমজীবীদের।
কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় এবার ৮৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড পাকিজা, ২শ হেক্টর জমিতে ড্রাগন, ১০ হেক্টর জমিতে সুইট ড্রাগন ও ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাক মাস্টার জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে। সূত্র জানায়, গত বছর দেলুটি ইউনিয়নের ২২নং পোল্ডারে সর্বোচ্চ ৩৮০ হেক্টর ও গড়-ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া কুমখালী এলাকায় ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হলেও এবছর গড়-ইখালীতে নানা প্রতিকূলতায় কোনো প্রকার আবাদ হয়নি। অন্যদিকে ২২নং পোল্ডারে আবাদ মৌসুমের নানা প্রতিকূলতায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩শ হেক্টর জমির আবাদ টিকে আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়া অবস্থান করায় সহকারী কৃষিকর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রিতে ৬০ হাজার টাকা করে মোট ১৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তরমুজ চাষী দেলুটির লোটন সরকার প্রায় ৮ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সমরেশ হালদার ৯ বিঘা জমিতে, সেনের বেড়ের শংকর জোয়ার্দ্দার ৭ বিঘা, গোপি পাগলা এলাকার অসিম রায় প্রায় ১২ বিঘা ও দুর্গাপুরের কৃষ্ণ কবিরাজ ১০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরো এফএনএসকে জানান, সার্বক্ষণিক উপজেলার দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তারা তরমুজের ক্ষেত পরিদর্শন ও নানা সংকটে পরামর্শ প্রদান করছেন। সর্বশেষ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিক্রয় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, আবাদ উপযোগী পরিবেশ ও দাম ভাল পাওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় লবণ পানির জনপদে চিংড়ির পরিবর্তে কৃষকরা আশা জাগানিয়া তরমুজ চাষে ঘটাতে পারেন এক নতুন বিপ্লব।