তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা) // খুলনার ফুলতলায় ধর্ষনের পর যুবতী মুসলিমা খাতুন(২০)কে গলা কেটে হত্যার তিন দিন পর সরাসরি জড়িত দুই হত্যাকারীকে গ্রেফতার এবং তাদের দেখিয়ে দেয়া স্থান থেকে খন্ডিত মস্তক, পরিধেয় জামা-কাপড়, স্যান্ডেল ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারলো বটি উদ্ধার করে পুলিশ ও র্যাব-৬। আটকৃতরা হলো ফুলতলার যুগ্নিপাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ খন্দকারের পুত্র রিয়াজ খন্দকার (৩২) ও শিলন সরদারের পুত্র সোহেল সরদার (২৫)। উদ্ধারকৃত মস্তকের ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ওই দু’যুবক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টায় ফুলতলার যুগ্মিপাশা এলাকার ঘটনাস্থলে র্যাব -৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ ঘটনার ব্রিফ দেন। গত ২৬ জানুয়ারি সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি রেজাউল সরদারের ধান খেত থেকে মুসলিমার মস্তকবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর থেকে র্যাব-ও পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাটিকে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। গোপন তথ্য ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত দু’যুবককে ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে র্যাব ফরিদপুর থেকে রিয়াজ খন্দকারকে এবং ফুলতলার উত্তরডিহির হাজী সেলিমের ডেয়ারী ফার্ম এলাকা থেকে সোহেল সরদারকে পুলিশ ও র্যাব আটক করে। আসামীদ্বয় হীন চরিত্রের অধিকারী ও লম্পট প্রকৃতির লোক। ইতোপূর্বে প্রতারনার মাধ্যমে অনেক মেয়ের সম্ভ্রম নষ্ট করার কথা রিয়াজ স্বীকার করে। তারই ধারাবাহিকতায় হত্যাকান্ডের তিনদিন আগে রিয়াজের সাথে মুসলিমার পরিচয় হয়। এরপর তারা একসঙ্গে দেখা করার জন্য মনস্থির করে। এজন্য রিয়াজ ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে আটটায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোবাইল ফোনে মুসলিমাকে ডেকে আনে। পরে যুগ্মীপাশা গ্রামে মুনসুর শেখের ঘরে নিয়ে দু’ঘন্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন চালায়। মেয়েটি যখন বুঝতে পারে সে প্রতারনার মধ্যে পড়েছে, তখন বাববার আকুতি করছিল, “তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কাউকে বলবো না। আমার বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে, আমি সেখানে যেতে চাই”। কিন্তু সোহেল ও রিয়াজ যুক্তি করে, তাকে ছেড়ে দিলে রক্ষা পাওয়া যাবে না। শাস্তি হবেই। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। কিন্তু মেয়েটিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে রাস্তায় নিয়ে আসে। একসঙ্গে হাটার এক পর্যায়ে তারা পিছন দিক থেকে গলা মোচড় দিয়ে চেপে ধরলে মেয়েটি মাটিতে পড়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় উড়না পেঁচিয়ে টেনে ধরে রাখে রিয়াজ ও সোহেল।
বিষয়টি অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা মেয়েটির মরদেহ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে মুসলিমার মরদেহ ঘাড়ে করে নিয়ে উত্তরের মাঠে রেজাউল সরদারের ধান খেতে নিয়ে মরদেহকে বিবস্ত্র করে ফের পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর রিয়াজ বাড়ি থেকে ধারালো বটি এনে তিন কোপে মেয়েটির মাথা বিছিন্ন করে। ওই স্থানে দেহ ফেলে রেখে পরনের কাপড় দিয়ে মাথা মুড়িয়ে এনে পাশর্^বর্তী নজরুল খা’র নির্মানাধীন বাড়ির বাথরুমের বালুর নিচে চাপা দিয়ে রাখে। পুলিশ ও র্যাব ওই স্থান থেকে মুসলিমার মাথা,পরনের কাপড়, পায়ের স্যান্ডেল এবং রিয়াজের বাড়ি থেকে বটি উদ্ধার করে। অভিযানকালে এলাকার হাজার নারী পুরুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লোমহর্ষক এ ঘটনার ধিক্কার জানায়। নিহতের বোন আকলিমা ও ফাতেমাসহ তাদের স্বজনেরা আহাজারি করতে থাকে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ বলেন, উদ্ধারকৃত মস্তকের ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আলামত হিসেবে জামা-কাপড়, স্যান্ডেল এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রিয়াজ ও সোহেলকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থানার অফিসার ইনচার্জ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ২৬ জানুয়ারি সকালে পরিত্যক্ত মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে সিআইডি পুলিশের ক্রাইম সিন ট্রিম দ্বারা মুসলিমার লাশ সনাক্ত করি। পরে তার মোবাইল ফোনের কল লিষ্টের সূত্র ধরে আসামী রিয়াজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু অভিযানের পূর্বেই সে পালিয়ে যায়। ব্যাব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফরিদপুর থেকে তাকে আটক করে। প্রসংগত গত ২৬ জানুয়ারি সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকায় ধান খেত থেকে মুসলিমা মস্তকবিহীন বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের ময়না তদন্ত শেষে ২৭ জানুয়রি মস্তকবিহীন দাফন সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে মুসলিমা মেঝ বোন আকলিমা খাতুন বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৫/৬জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।