তাপস কুমার বিশ্বাস, ডেক্স রিপোর্টঃ খুলনার ফুলতলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মোল্যা হেমায়েত হোসেন লিপু’র হত্যা ঘটনায় তার ভাই মোল্যা হেদায়েত হোসেন লিটু বাদি হয়ে এজাহার নামীয় ৮জন সহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামী চরমপন্থী ক্যাডার ও আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক মোল্যাসহ দু’জনকে আটক করেছে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন।
শুক্রবার রাতে ফুলতলার গরুহাট এলাকায় সন্ত্রসাীদের গুলিতে নিহত লিপুর ভাই ও ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্যা হেদায়েত হোসেন লিটু বাদি হয়ে মামলা (নং-১৪, তারিখ-১৯/১২/২০২০ইং) দায়ের করেন। মামলায় বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা ও বাহিনীর প্রধান ফারুক মোল্যাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ঐ রাতেই পুলিশ ফুলতলার পয়গ্রামের একটা বাড়ি থেকে ফারুক মোল্যা (৪৫) , তার সহযোগী কালিয়া থানার সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃতঃ আবু বক্কার শেখের পুত্র মুরাদ হোসেন শেখ (৪০) ও শনিবার সন্ধ্যায় পয়গ্রামের সিরাজুল শেখের পুত্র মিন্টু শেখ (৩৭) কে আটক করে। আটকদ্বয়কে গতকাল শনিবার আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ডাবেদন করা হয়। ওসি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, অবৈধ অর্থের ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩ টি গুলির খোসা, ১টি মোবাইল সেট ও ১টি চশমা উদ্ধার করে। গুলিতে নিহত হেমায়েত হোসেন লিপুর বুকে, তলপেটে ঝাঝরা এবং কপাল ও মুখ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানিয়েছেন। মামলার অন্যান্য আসামীদের আটক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ফুলতলার তাঁজপুর গ্রামের মৃত আঃ সামাদ মোল্যার পুত্র ও আওয়ামীলীগ নেতা হেমায়েত হোসেন লিপু নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের ক্যাডার হিসেবে পুলিশের তালিকাভ‚ক্ত থাকায় ২০১৯ সালের মে মাসে পাবনায় গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নিকট অস্ত্র দিয়ে আত্মসমার্পন করে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকার প্রদত্ত আর্থিক অনুদান পেয়ে এলাকায় অবস্থান করছিল। পয়গ্রামের মৃতঃ হাসান মোল্যার পুত্র ও বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা ফারুক মোল্যার নেতৃত্বে ঐ আত্ম সমার্পন অনুষ্ঠানে ফুলতলা এলাকার ৩২ ক্যাডার আত্ম সমার্পন করে। সরকার প্রদত্ত মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে। গেল রমজানের ঈদে ফুলতলা উপজেলা অডিটরিয়ামে স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও খুলনা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহের উপস্থিতিতে ঈদ উদযাপনের জন্য প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। তবুও থেমে ছিল না তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। খেয়া ঘাটের ইজারা, ভৈরব নদের অবৈধ বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ফুলতলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে ফারুক মোল্যা প্রার্থী হিসাবে এলাকায় পোষ্টারিং করে। অপরদিকে ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন মোল্যা বাজার বণিক কল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসাবে প্রচার ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও তিনি আবারও ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। তার প্রধান সহযোগি হিসাবে চাচাত ভাই হেমায়েত হোসেন লিপু সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ বিষয় নিয়েও তাদের আভ্যন্তরীন টানা পড়েন থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারনা।
গতকাল দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বাদ আছর ফুলতলা রি-ইউনিয়ন স্কুল মাঠে নিহত লিপুর জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার, শিল্পপতি আলহাজ্ব ইমামুল হক ভুইয়া, হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া, নিহতের ভাই মোল্যা হেদায়েত হোসেন লিটু, মোল্যা আলমগীর হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি তাপস কুমার বিশ্বাস, আওয়ামীলীগ নেতা কামরুজ্জামান নান্নু প্রমুখ।