বঙ্গবন্ধু ছাত্রপরিষদের নেতা সাব্বির’র লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

প্রকাশঃ ২০২০-০৪-১৬ - ১৬:২৭

যশোর প্রতিনিধি  : বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ রাসেলের লাশ নিয়ে ছাত্রলীগ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে। এসময় তারা খুনিদের আটকের দাবি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। একই সাথে দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় এনেছে।
স্থানীয়রা জানান, সাব্বির আহমেদ রাসেলের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষ হলে তার পিতা আরবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সালেক মৃধার কাছে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় লাশ বুঝে দেয়। এরপর আরবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক দিপু, যুগ্ম আহবায়ক শিমুল এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভকারীরা রাসেলের খুনিদের অবিলম্বে আটক ও ফাঁসির দাবি করেন।
যশোর কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আসামিদের আটকের জন্য কোতয়ালি থানায় এসআই সুকুমার কুন্ডুসহ পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। খুনিদের অবিলম্বে আটক করা হবে। তবে হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া শ্মশান পাড়া থেকে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
যশোর পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল ক) গোলাম রব্বানি জানান, রাসেল হত্যাকান্ডে কাউকে আটক করা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুইজনকে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম ঠিকানা পরিচয় জানানো সম্ভব হচ্ছে না।
আরবপুর ইউনিয়ানের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক সাহারুল ইসলাম বলেন পূর্ব শত্রুতার জেরধরে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। রাসেল দলের একজন নিবেদিত কর্মী। সে বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ ও হতাহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সালেক  মৃধার বাড়ির সামনে রাস্তার ওপরে ইউপি সদস্য চায়না খাতুন ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে তালিকা তৈরির কাজ করছিলেন। এ সময় স্থানীয় যুবক সামিরুল (২৮) ও তার দুই সহযোগী দ্রæতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাব্বির তাদের মোটরসাইকেল থামিয়ে গালমন্দ করেন। এতে সামিরুল ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সামিরুল তার সহযোগীদের নিয়ে সাব্বিবের বাড়িতে গিয়ে তাকে ধরে আনার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে সাব্বিরের ভাই আল-আমিনকে কুপিয়ে জখম করে সাব্বিরকে ধরে পাশের আমবাগানে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে কোপ দিয়ে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাব্বিরকে মৃত ঘোষণা ও আল–আমিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
নিহত সাব্বিরের বাবা সালেক মৃধা সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে ত্রাণ বিতরণের জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলছিল। এ সময় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সামিরুল ও তার সহযোগী পিচ্চি বাবু সেখানে গেলে আমার ছেলে সাব্বির তাদের মোটরসাইকেল আস্তে  চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। এতে সামিরুল ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের মধ্যেই সাব্বিরকে হত্যা করার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দেন। পরে বাড়ি থেকে সাব্বিরকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঠেকাতে গেলে অপর ছেলে আল–আমিনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। পুরো ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছে। বাবা হয়ে আমি কিছুই করতে পারিনি। এর আগে পাঁচবার তারা সাব্বিরের ওপর হামলা করে।’
তবে, স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই এলাকায় দুটি পক্ষ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান সাহারুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগের নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ দুপক্ষের নেতৃত্ব দেন। সাব্বির ও আল–আমিন সাহারুলের পক্ষে এবং হত্যাকান্ডে যাদের নাম আসছে, তারা শহীদুলের পক্ষে রয়েছেন। স্থানীয় আধিপত্যেবিস্তার দ্বন্ধ তাদের অনেক দিন আগে থেকেই চলছে।