বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশঃ ২০২৩-০৪-০৬ - ১৭:০৭

মঙ্গলবার রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বৃহৎ তৈরি পোশাকের বাজার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সকাল সোয়া ৬টার দিকে আগুন লাগে। একপর্যায়ে পাশের গুলিস্তান মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার ও মহানগর মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৫০টি ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের কয়েক হাজার দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি।

বঙ্গবাজারে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদুল ফিতর, সবাই ঈদ কেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য বিপুল পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এ অগ্নিকাণ্ড তাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে অনাকাক্সিক্ষত বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনা। সেগুলোর মধ্যে সিদ্দিক বাজার, চুড়িহাট্টা, নিমতলী, তাজরীন গার্মেন্টস, নারায়ণগঞ্জের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ফ্যাক্টরি, এফআর টাওয়ার, নারায়ণগঞ্জ মসজিদে গ্যাস লিকেজ, মগবাজারে গ্যাস বিস্ফোরণ ও সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর অক্সিজেন পার-অক্সাইডজনিত বিস্ফোরণ উল্লেখযোগ্য। এসবে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। একই সঙ্গে আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ।

শুষ্ক মৌসুমে আবহাওয়া শুকনা থাকায় সামান্য আগুনের স্পর্শ পেলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বছরের এই সময় সাধারণত অগ্নিকাণ্ডের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অসতর্কতা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, কোনো ধরনের বিস্ফোরণ, ষড়যন্ত্র কিংবা অন্য যে কোনোভাবে অগ্নিকা- ঘটতে পারে। একেকটি দুর্ঘটনা মানুষের জন্য শিক্ষণীয় কিছু রেখে যায়। সেই শিক্ষালব্ধ অভিজ্ঞতা পরবর্তী দুর্ঘটনা মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হয়। কিন্তু আমরা যেন বরাবরই এ সম্পর্কে উদাসীন। একের পর অগ্নিকাণ্ডের পরও প্রতিকারে তেমন কোনো উন্নতি নেই। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের জন্য নগর বিশেষজ্ঞরা অপরিকল্পিত নগরায়ণকেই মূলত দায়ী করেন।

২০১৯ সাল থেকে ফায়ার সার্ভিস বারবার সতর্ক করার পরও বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা দুঃখজনক।

প্রাকৃতিক কিংবা দৈববলে আমাদের নানা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু ভর্তুকি দিয়ে এসবের ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার বিপরীতে গ্রুপ বীমা করেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।

যখন কোনো দুর্ঘটনা নিজেদের উদাসীনতার কারণে সংঘটিত হয় এবং এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে, তখন তা একটি জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনকই বটে। নিজেদের কারণে সংঘটিত এ ধ্বংসাত্মক অবস্থা থেকে ফিরে আসতে সর্বত্র আমাদের সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যথায়, অগ্নিকাণ্ডের সমূহ ক্ষতির শঙ্কা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।