বটিয়াঘাটায় হলুদ সাংবাদিকের উপদ্রব বৃদ্ধি

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-২২ - ২৩:২৩

বটিয়াঘাটা : বটিয়াঘাটা উপজেলায় উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে হলুদ সাংবাদিক। এসব সাংবাদিকদের দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে প্রকৃত ইমেজধারী সংবাদকর্মীরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী, সরকারী চাকুরীজীবি, ঘেরমালিক, শিক্ষক ও নানান শ্রেনীপেশার মানুষদের টার্গেট করে এরা চালাচ্ছে নীরব চাঁদাবাজি। কথিত ঐ সকল চাঁদাবাজ, মাদক, পিলার ও তক্কক ব্যাবসায়ীরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকতার মত মহান পেশাকে বেছে নিয়েছে।  নামধারী এসব হলুদ সাংবাদিকেরা কেউ কেউ ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বিভিন্ন ব্যক্তিদের হয়রানীমূলক তথ্য লেখা উপহুাপন সম্বলিত পোষ্ট করে ব্লাকমেইলিং এর মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টি থেকে পরিত্রান পেতে ভূক্তভোগী জনসাধারন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত ঐ সকল হলুদ সাংবাদিকেরা নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলে সংবাদপত্র কিংবা প্রেস লিখে ভূমি অফিসে মিউটেশন, থানায় জিডি সহ নানান অপকর্ম ও বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের যন্ত্রনায় চরম অতিষ্ট হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রশাসন, ঘেরমালিক, বসতি দোকানদার, জমি ক্রেতা-বিত্রেতা, শিক্ষক সহ নানান শ্রেনীপেশার মানুষ। অনেকে হলুদ সাংবাদিদের ভয়ে আতংকিত হয়ে মূখ খুলতে নারাজ। বর্তমানে ঐ সকল হলুদ সংবাদিকেরা বিভিন্ন দালালী থেকে শুরু করে নামপত্তনজারী করে দেওয়া, ডিসিআর পাইয়ে দেওয়া, মামলা এফআইআর, জিডি এন্ট্রি করে দেওয়া সহ নানান প্রলোভন দেখাচ্ছে নিরীহ ব্যক্তিদের। অনিয়মিত কিংবা কালেভদ্রে প্রকাশিত হওয়া এমন সব পত্র-পত্রিকার কার্ডধারী হলুদ সাংবাদিকেরা বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে উৎকোচের বিনিময়ে নীরব চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। এতে করে প্রকৃত সংবাদ কর্মীরা অহরহ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি এ উপজেলায় হলুদ সাংবাদিকদের আনাগোনা এতাটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারন মানুষ এদের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। এদের দ্বারস্থ না হতে পারলে উপজেলার কোনো মিউটেশন কেস্ ও নামজারী কেস্ করা সম্ভবপর হয় না। এদের সাথে যোগসূত্র রয়েছে ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীরা। পরগাছার মতো গজিয়ে উঠা ঐ সকল হলুদ সাংবাদিকদের কোনো একাডেনিক সার্টিফিকেট থাকা তো দূরের কথা সংবাদ তৈরী করা ও সভ্য সমাজে ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে কথা বলতে তারা পারে না। তবে দালালীতে বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে তারা বেশ অভ্যস্ত। এদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দিলেও তারা হাজির হয়ে সামনের সারিতে বসে পড়ে। এমনকি আয়োজকদের কাছে সংবাদের জন্য অর্থ দাবী করে। বেশকিছুদিন ধরে এ ধরনের নৈরাজ্য চলে আসলেও গত ২/৩ বছর পূর্বে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী কর্মকর্তারা এদের দমন করতে বেশ খানিকটা নড়ে চড়ে বসে। ফলে কথিত ঐ সকল হলুদ সাংবাদিকেরা গাঁ ঢাকা দিতে শুরু করে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে জনগনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধে জেল জরিমানা ও মামলা পর্যন্ত গড়ায়। ফলে দিনে দিনে অপরাধ প্রবনতা এ উপজেলা থেকে কমতে শুরু করে। বর্তমানে টাউট, মিউটেশন নামধারী হলুদ সাংবাদিকের দৌরাত্ব্য আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। হলুদ সাংবাদিকের দৌরাত্য নিবৃত করতে উপজেলার ভূক্তভোগী জনসাধারন প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কমনা করেছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে থানার ওসি মোঃ মোজাম্মেল হক মামুন জানান, যারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করে তারা নিশ্চয়ই হলুদ সাংবাদিক। এরা কখনোই প্রকৃত সাংবাদিক হতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে আমরা অবগত রয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পথেই আছি। জেলা পুলিশ সুপার মোল্লা নিজামুল হক জানান, হলুদ সাংবাদিক কখনই প্রকৃত সাংবাদিক হতে পারে না। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান জানান, আমি বর্তমানে ঢাকাতে কর্মশালায় অবস্থান করছি। ফিরে এসে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া জানান, বিষয়টি যদিও আমার নয়, তবুও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহন করতে নির্দেশনা প্রদান করবো।